32 C
Dhaka
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

সামরিক বিমানে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর অংশ হিসেবে অভিবাসীদের ধরপাকড় ও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ট্রাম্প প্রশাসন এমন এক সময়ে, যখন এই বিষয়টি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এবং অভিবাসন আইনপ্রণালীকে সামনে রেখে আলোচনা হচ্ছিল, তারা বিশেষভাবে সামরিক বাহিনীর বিমান ব্যবহার করে এসব অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে, সম্প্রতি মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অত্যাধিক ব্যয়ের কারণে এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক জটিলতার মুখে। গত ১ মার্চ পর্যন্ত, মার্কিন সামরিক বাহিনী সি-১৭ ও সি-১৩০ উড়োজাহাজ ব্যবহার করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছিল। তবে, পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে এবং এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এদিকে, ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর, ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নথিবিহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান। ট্রাম্প প্রশাসন একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে, যা ছিল অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে। তার এই আদেশের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয় এবং হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গ্রেপ্তার করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সামরিক বাহিনীর সি-১৭ এবং সি-১৩০ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছিল। পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত মোট ৩০টি সামরিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে। এই ফ্লাইটগুলির মাধ্যমে ভারত, গুয়েতেমালা, ইকুয়েডর, পেরু, হন্ডুরাস, পানামা, এবং গুয়ান্তানামোসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তবে, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সামরিক বিমানের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল।

প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছিল, যা দেশের আর্থিক ও কূটনৈতিক বিবেচনায় সমস্যার সৃষ্টি করছিল। এক হিসাব অনুযায়ী, ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা প্রতিটি ফ্লাইটে প্রায় ৩০ লাখ ডলার খরচ হয়েছিল। এছাড়া, প্রতিটি উড়োজাহাজে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হয় ২৮,৫০০ ডলার, যা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যে এক চুক্তি রয়েছে, যার শর্ত হলো— মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ মেক্সিকোর আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না। এর ফলে, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার আকাশসীমা ব্যবহার করতে হচ্ছিল, যা ফ্লাইটের সময় এবং খরচ দুটোই বাড়িয়ে দিচ্ছিল। অন্যদিকে, লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা মার্কিন সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজকে তাদের বিমানবন্দরে অবতরণ করতে দেবে না। এই পরিস্থিতির কারণে, অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়েছিল।

এইসব কারণেই সামরিক বাহিনীর বিমানে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এটি একটি বড় সিদ্ধান্ত, যেহেতু এই কার্যক্রমের মধ্যে যেসব অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের জন্য সামরিক বাহিনীর পরিবহন ব্যবস্থাকে গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার করা হয়েছিল।

এখন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নতুন কোনো পদ্ধতিতে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে, এই সিদ্ধান্তের ফলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আসবে।

পড়ুন : অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র

দেখুন : গাজীপুরে তিনটি ভবনে হতো অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, বিস্মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী! |

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন