শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ ওঠা বিচারপতিদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
হাজার হাজার শিক্ষার্থী। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। তাদের স্লোগান, অবস্থান কর্মসূচিতে উত্তাল পুরো হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ।
অভিযোগ ওঠায় ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির
নানা অভিযোগ ওঠায় ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের দপ্তরে একে একে প্রবেশ করছেন অভিযোগ ওঠা হাইকোর্টের বিচারপতিরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চারজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির চায়ের দাওয়াতে এসেছেন। তারা হলেন- বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামান ও বিচারপতি শাহেদ মো. নুরউদ্দিন। তাদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
জানা গেছে, আমন্ত্রণ পাওয়া ১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তারা সাবেক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই ১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। ধারনা করা হচ্ছে এই ১২ বিচারপতি আর বিচারকার্যে ফিরতে পারবেন না। তারা বিচারিক ক্ষমতা হারাতে পারেন।
দুপুর ২টার মধ্যে বিচারকদের অপসারণ করতে আল্টিমেটাম
হাইকোর্ট বিভাগের আওয়ামী লীগের ‘দলবাজ’ বিচারকদের দুপুর ২টার মধ্যে পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এই আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করবেন তারা।
হাইকোর্ট ঘেরাওয়ে শিক্ষার্থীরা, বিক্ষোভ মিছিল আইনজীবীদের
‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে হাইকোর্ট অভিমুখে যায় শিক্ষার্থীদের মিছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’; ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’; ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’সহ নানা স্লোগান দেন।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে যাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীদের মিছিলটি ভিসি চত্বরে ফিরে আসে। এরপর দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্টের দিকে যায়।হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল আদালত চত্বরে এসেছে। একই দাবিতে তারা হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছে।
এ কর্মসূচি ঘিরে বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে হাইকোর্টসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকে হাইকোর্ট মাজার গেটসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকেও রয়েছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচিতে জড়ো হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
এদিকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ এ ঘোষণা দেন।
সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীরা জড়ো হচ্ছেন। এ সময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের মূলত ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনী হাসিনার ফাঁসি চাই’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান’; ‘ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, হাইকোর্ট ঘেরাও হবে’; ‘দালালী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’; ‘দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচির ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ।
২০-২৫ আইনজীবী এই বিক্ষোভে অংশ নেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় বিক্ষোভ থেকে একজনকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতিক্রিয়ায় হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচির ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক।