দুবাইয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন অন্তত ৭০ জন ‘ভিআইপি’ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই তালিকায় রয়েছেন রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা।
সংযুক্ত আরব আমিরাত দুবাইয়ে তাদের ৯৭২টি স্থাবর সম্পত্তি কেনার অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এদিকে গত ১৬ এপ্রিল সংশ্লিষ্টদের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্নসহ যাবতীয় তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে তথ্য তলব করেছে সংস্থাটি।
দুদকের উপ-পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডলের সই করা চিঠিতে বলা হয়, দুবাইয়ে যেসব সম্পদ কেনা হয়েছে, তার অর্থের উৎস হিসেবে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে রাখা অর্থ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরের কাছে বিস্তারিত আর্থিক তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার এবং দুবাইয়ে ৯৭২টি স্থাবর সম্পত্তি কেনার অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এসব ব্যক্তি সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার করে পরবর্তী সময়ে সেই অর্থের বিনিময়ে ‘গোল্ডেন ভিসা’ সুবিধার আওতায় কিনেছেন সম্পত্তিও।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ৪৫৯ ব্যক্তির নাম-পরিচয়সহ কর শনাক্তকরণ নম্বর সার্টিফিকেট এবং সংশ্লিষ্ট কর সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বা ভিউ ডিটেইলস সংগ্রহ জরুরি। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের কর সংক্রান্ত রেকর্ড আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে দুদকে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
তালিকাভুক্ত ৭০ জনের মধ্যে রয়েছেন– রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, আমলা, বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বিনিয়োগকারীসহ নানা পেশার লোকজন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে চিহ্নিত সন্দেহভাজন ৭০ ভিআইপি-এর নাম দেওয়া হলো, যাদের বিষয়ে কর নথি তলব করা হয়েছে : আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা /হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান /সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান এবং মায়নুল হক সিদ্দিকী।
এছাড়াও তালিকায় আরও যেসব নাম রয়েছে- মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী এবং মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম।
এই তালিকা অনুসারে এনবিআর-এর কাছে তাদের ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্নসহ যাবতীয় কর সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক।
পড়ুন : শেখ হাসিনা ও টিউলিপকে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু : দুদক কমিশনার