১৪/০৭/২০২৫, ১৮:৪৪ অপরাহ্ণ
25.7 C
Dhaka
১৪/০৭/২০২৫, ১৮:৪৪ অপরাহ্ণ

অর্থ উপদেষ্টা–গভর্নরের বিরুদ্ধে পরোয়ানা স্থগিত

আমেরিকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। আজ শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান। 

ওই পোস্টে আনসারি বলেন, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক একটি চুক্তি বাতিলের দায়ে স্মিথ কোজেনারেশন ক্ষতিপূরণ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলা করে।  ১৯৯৭ সালে স্মিথ কোজেনারেশন তৎকালীন বাংলাদেশের সরকারের সাথে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমতি প্রদান করেছিল সরকার। এই মামলায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর ওয়াশিংটন ডিসি সার্কিট আদালত অনেকটা এখতিয়ার বহির্ভূত একটি রায় প্রদান করে, যা শুক্রবার আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়। যদিও বিষয়টির সাময়িক অবসান ঘটেছে।

এর আগে আমেরিকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ল–৩৬০-এর প্রতিবেদনে বলা হয়,  ২০০৬ সালের মামলায় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে ‘গ্রেফতারের জন্য বেঞ্চ ওয়ারেন্ট’ জারি করেছে একটি মার্কিন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) এই আদেশ জারি করা হয়।

বাংলাদেশের কাছ থেকে ৩১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার জরিমানার আদায় করার বিষয়ে তাদের জবানবন্দি নিতে এই আপিল করেছিল স্মিথ কোজেনারেশন (বাংলাদেশ)।

মার্কিন এই কোম্পানির এমন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার অবিলম্বে একটি আপিল করে। স্মিথ কোজেনারেশন (বাংলাদেশ)-এর আপিলটি মঞ্জুর করে আহমেদ ও মনসুরকে ‘আটক করে আদালতে আনার জন্য’ মার্কিন মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন জেলা জজ কার্ল জে নিকোলস।

কোম্পানিটি আহমেদ ও মনসুরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘দুইজন সিনিয়র নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং বলেছে, সালিশি জরিমানা আদায়ের জন্য কয়েক দশকের ধরে চলমান দীর্ঘ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তাদের জবানবন্দি প্রয়োজন।

২০০৬ সালে মামলাটি দায়ের করা হয়। এর মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো ডিসি আদালতে দ্রুত একটি আপিল দাখিল করে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে দাখিল করা ওই আপিলে বাংলাদেশ দাবি করে, আহমেদ ও মনসুরকে গ্রেফতারের আদেশ দেওয়ার কোনও এখতিয়ার বিচারক নিকোলসের নেই৷

বাংলাদেশ তার আপীলে লিখেছে, ‘এছাড়া, যে দুজন ব্যক্তিকে বেঞ্চের ওয়ারেন্টের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যারা উভয়েই উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি ও দেওয়ানী প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত।’

বাংলাদেশ বলেছে, এই আপিলের আওতায় অবিলম্বে বিচারক নিকোলসের আদালতের এখতিয়ার বাতিল ও বেঞ্চের ওয়ারেন্ট প্রয়োগযোগ্য নয়।

বুধবারের প্রস্তাবে স্মিথ কোজেনারেশন বলেছে, আহমেদও মনসুরকে আদালতের আদেশের অধীনে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বুধবার হাজির হওয়ার কথা ছিল। তবে তাদের আদালতে দেখা যায়নি।

স্মিথ কোজেনারেশন তাদের প্রস্তাবে বলেছে, ‘এই আদালতের আদেশ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার আদালতের কর্তৃত্বকে উপেক্ষা করতে থাকবে এবং জবানবন্দির নোটিশগুলো মানবে না বা সাড়া দেবে না।’

আহমেদ ও মনসুর দুজনেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ছিলেন।

স্মিথ কোজেনারেশন বলেছে, এই সফরটি তাদের জবানবন্দি নেওয়ার একমাত্র সুযোগ হতে পারে।

স্মিথ কোজেনারেশন আরও বলেছে, ২০০২ ও ২০০৩ সালে লন্ডনের একটি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ জারির পর থেকে সালিশি জরিমানাগুলো আদায় করার জন্য বছরের পর বছর ধরে লড়াই করছে কোম্পানিটি।

১৯৯৭ সালে এই বিরোধের সূত্রপাত। তখন দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি ভাসমান বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য স্মিথ কোজেনারেশন বাংলাদেশ সরকার ও দেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে।

ল৩৬০ এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৬ সালের একটি ‘এনফোর্সমেন্ট পিটিশনে’ স্মিথ কোজেনারেশন মার্কিন ডিসি আদালতকে বলেছিল, বাংলাদেশ সরকার তাদের কোম্পানিকে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের অনুমোদন দিতে রাজি হয়েছিল।

তবে স্মিথ কোজেনারেশন দাবি করছে, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় এবং কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়নি। তখন দেড় মিলিয়ন ডলার ‘পারফরম্যান্স বন্ড’ গ্যারান্টির চুক্তি করা হয়েছিল, যার অর্থায়ন করেছিল স্মিথ কোজেনারেশন।

আদালতের নথি অনুসারে, কোম্পানিটি ওই বছরই আইসিসি ট্রাইব্যুনালে সালিশি শুরু করে এবং ট্রাইব্যুনাল পরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-কে ১৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেয়। বোর্ডটিকে তখন অতিরিক্ত ৩৯ হাজার ডলার গুণতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং পিডিবি ও বাংলাদেশ সরকার ২ লাখ ২২ হাজার ডলার দিতে বাধ্য ছিল।

একজন ডিসি ফেডারেল বিচারক ২০০৭ সালে ক্ষতিপূরণগুলো নিশ্চিত করেছেন এবং মে মাসে স্মিথ কোজেনারেশনের অনুরোধে আদালত তার চূড়ান্ত রায় সংশোধন করে। স্মিথ কোজেনারেশনের কৌঁসুলি ল৩৬০-কে বলেছেন, সুদ ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় বাংলাদেশের কাছে এখনও ৩১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পাওনা রয়েছে স্মিথ কোজেনারেশনের।

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন