অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩ মে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ শুক্রবার এ ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২২ সালে ক্ষমতায় আসা লেবার পার্টির নেতা আলবানিজের সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, পরমাণু শক্তি এবং আবাসন খাতের ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে, আগামী নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ও বিরোধী দল ডানপন্থি লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের নেতা পিটার ডাটনের মধ্যে।
নির্বাচন সামনে রেখে জনমত জরিপের মাধ্যমে এই দুই দলের মধ্যে প্রায় সমান জনপ্রিয়তা দেখা গেছে। আলবানিজের লেবার পার্টি ২০২২ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর প্রায় এক দশক ক্ষমতায় থাকার পর হেরে যাওয়া রক্ষণশীল সরকারের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের সমর্থন পেয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার সরকারের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গেছে।
এবারের নির্বাচনে আলবানিজের সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি ইতোমধ্যেই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ছাত্র ঋণ কমানো এবং ছোট কর কর্তনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী পিটার ডাটনকে দেশের জন্য পিছিয়ে যাওয়া হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘১০ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে আরও বেশি সময় লাগবে।’
অন্যদিকে, বিরোধী দলীয় নেতা পিটার ডাটন আলবানিজের সরকারের সমালোচনা করে বলছেন, তার সরকার দুর্বল এবং সরকারি অনুদানের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ৭.৮ শতাংশ থেকে ২.৪ শতাংশে নেমে আসলেও, অনেক পরিবার এখনো খাদ্য, জ্বালানি এবং বিদ্যুতের উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে।
আলবানিজ এবং ডাটনের মধ্যে পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়েছে তাদের রাজনৈতিক নীতিতে। আলবানিজের সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং সাশ্রয়ী ও টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তার নির্বাচনী প্রচারণার মূল সুর হল ‘অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যত নির্মাণ’, যেখানে তিনি সবুজ জ্বালানি উৎপাদন ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এদিকে, পিটার ডাটন পারমাণবিক শক্তি ও অভিবাসন কমানোর পরিকল্পনা করছেন। ডাটন ২০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সাতটি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন।
তবে, নির্বাচনী প্রচারণার সময়, দুটি দল একে অপরকে বিপরীতমুখী দৃষ্টিকোণ থেকে আক্রমণ করছে। আলবানিজ সরকার কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বৈশ্বিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং দেশের অর্থনীতি আর খনিজ লোহা বা দূষণ সৃষ্টিকারী কয়লার ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার কথা বলছে। অন্যদিকে, ডাটন তার পরিকল্পনায় টেকসই জ্বালানির উৎস খোঁজার বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেননি এবং তিনি আছেন কয়লা ও পরমাণু শক্তির উপর নির্ভরশীল।
এই নির্বাচনে কেমন হবে ভোটের ফলাফল, তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে বিশ্লেষকদের মতে, অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী ৩ মে অস্ট্রেলিয়ার জনগণ তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, এবং নির্বাচনে জিততে দুই প্রধান দলই তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে।
পড়ুন: ঈদের পরপরই ঢাকায় চালু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম
দেখুন: সিরিজ খেলতে ঢাকায় এলো অস্ট্রেলিয়া নারী দল |
ইম/