আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কিনা সেটি তাদের সিদ্ধান্ত। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইনের নেয়া সাক্ষাতকারে আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারাই (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নেবে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। আমি তো তাদের হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচনে কে অংশ নেবে, তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে।
তিনি জানান, প্রত্যাশা অনুযায়ি সংস্কার দ্রুত হলে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে, আর সংস্কারের বেশি দরকার হলে নির্বাচন হতে আরও কয়েকমাস লাগতে পারে।
বর্তমানে অর্থনীতি, শান্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সম্পূর্ণ একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি গেলো বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে পরিস্তিতি ঠিক আছে বলে মত দেন প্রধান উপদেষ্টা।

এদিকে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার এক ইউটিউব ভাষণের ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা হয়। এমনকি শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতাকে ন্যায়সংগত বলে উপস্থাপন করছে। এ বিষয়ে বিবিসি ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাইলে, তিনি তাঁর সরকারের অবস্থানকেই সমর্থন করেন।
আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আদালত আছে, আইন আছে, থানায় অভিযোগ করা যায়। আপনি কেবল বিবিসির প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বসে থাকবেন না, থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন এবং দেখুন আইন কীভাবে কাজ করে।’
রাজনৈতিক বক্তব্য কেন দিতে হলো

আওয়ামী লীগ নিয়ে অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য কি রাজনৈতিক?
দেশের পরিস্থিতি এবং নানামুখী চাপের কারণে অধ্যাপক ইউনূসকেও একটা অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য দিতে হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন।
আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেম-এর শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বসহ বিভিন্ন পক্ষ ক্ষমতার কেন্দ্রের চারপাশে রয়েছে। তাদের দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতাদের আইনগতভাবে বিচারের পাশাপাশি দলটির বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে অবস্থান নেওয়ার চাপ থাকতে পারে।
দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও তারা সামনে আনছে। অধ্যাপক ইউনূসের এমন বক্তব্যের ক্ষেত্রে সেটিও একটি বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ওই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ আবার মনে করেন, দেশের জনগণের একটা অংশের সমর্থন ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলেও সেই সমর্থন শেষ হয়ে যায়নি। একই সঙ্গে দলটির প্রধান নেতা দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে আছেন এবং ভারতের সমর্থন পাচ্ছে দলটি। ফলে দলটি দেশের ভেতরে সংগঠিত হতে না পারলেও বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থিরতা তৈরির পেছনে থাকতে পারে কি না- এ ধরনের সন্দেহ, চিন্তা অন্তর্বর্তী সরকার ও তাদের মিত্র পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে।
তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় বা শঙ্কাও কাজ করতে পারে। সেজন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বক্তব্য বাড়ছে।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস যে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকির কথা বলেছেন, এই হুমকি কি আওয়ামী লীগ থেকে আসছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেছেন, অবশ্যই। এটাতো অবভিয়াস। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। এড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বিষয়টাকে ভিন্নভাবেও দেখছেন। তারা মনে করেন, এর আগে রাজনৈতিক সরকারগুলোকে ব্যর্থতার দায় এড়াতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযোগ আনতে দেখা গেছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
দেখুন: হঠাৎ ভারতেই ভাইরাল শেখ হাসিনা, অবাক হচ্ছে গোটা বিশ্ব!