দুই মাস আগেও দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দল কল্পনা করা যেত না। তবে মাস দুয়েকের ব্যবধানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেই আওয়ামী লীগের টিকিটিও। এমন কি দু-একজন যারা, সংস্কারপন্থী আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে আছেন তারাও পরিচয় দিতে করছেন কুণ্ঠাবোধ। আর এরই মাঝেই জুলাই গণহত্যার কারণে জোরালো গুঞ্জন উঠেছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে করার। সে সম্ভাবনা কতটা? বাস্তবতা কি বলছে? কিংবা কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এই আওয়ামী লীগ। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের অবস্থান আসলে কোথায়?
সরকার পতনের পর একে একে দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতা। দলটির সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্যের কোন খোঁজ নেই। দ্বিতীয় সারির নেতারাও রয়েছেন আত্মগোপনে। তাহলে কি ‘আত্নগোপনে’ থেকে ‘নিষিদ্ধ’ নামের নৌকায় পাল তুলছে আওয়ামী লীগ?
৫ই আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের প্রায় সব কার্যালয় ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। নেতাদের নামে, বেনামে হরহামেশা মামলা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়া কার্যত নেই কোন কার্যক্রম। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন আওয়ামী লীগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে দেশের কোন পরিবর্তন কিংবা নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তাই কি দিলেন জয়?
এখান থেকে আওয়ামী লীগ অবশ্য ঘুরে দাঁড়াতেও পারে। অতীতে তারা তা করে দেখিয়েছে। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর বর্তমান অবস্থার থেকে আরো বেশি নড়বড়ে ছিলো সে সময়ের আওয়ামী লীগ। সেখান থেকে ভালোভাবে দাঁড়িয়ে ছিল দলটি। এখন তাহলে মাঝিহীন নৌকার করনীয় কি?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,নিজেদের হারানো গৌরব আর ঐতিহ্য ফিরে পেতে আওয়ামী লীগকে আত্মসমালোচনার পাশাপাশি নিজেদের ভুল স্বীকার করতে হবে। একই সাথে ঝেড়ে ফেলতে হবে একক কর্তৃত্ববাদ। তাহলে হয়ত দেখা মিলবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের। এবার আসা যাক আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ও বাস্তবতা!
ওয়েমার রিপাবলিক প্যারাডেনের আইডিয়া মতে, কোন রাষ্ট্র যদি মনে করে কোন দলের কারনে রাষ্ট্র ভবিষ্যতে একক কতৃত্ববাদের দিকে চলে যাবে। তাহলে সে দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের তাহলে সুযোগ আছে নিষিদ্ধ করার, কিন্তু আইন কি বলে?
কোন দল যদি রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজের সাথে জড়িত থাকে। সে তথ্য-উপাত্ত পেলে নির্বাহী আদেশে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমানিত না হলে নিষিদ্ধ করা যাবে না কোন সংগঠনকে। ২৪ এর গণহত্যা, দল হিসেবে যে আওয়ামী লীগই করেছে তার প্রমান এখনও যথোপযুক্ত ভাবে উঠে আসেনি। সুতরাং আইনের চোখে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনো নিরপরাধ। তবে কী বলছেন আইন উপদেষ্টা ও আইনের সর্বোচ্চ কর্তা?
১৯শে আগস্ট, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য হাইকোর্টে রিট হলেও, ১ সেপ্টেম্বর রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্টের এক দ্বৈত বেঞ্চ। আওয়ামী লীগের অনেক ভালো নেতাকর্মীও রয়েছে, তারা দলের আদর্শ ধারণ করেন। এজন্য দল নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই বলেন অ্যার্টনি জেনারেল। আর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মনে করেন ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না।’ যাদের আন্দোলনে পতন হল শেখ হাসিনা সরকারের, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে তারাই বা কি ভাবছেন?
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকারের জায়গা থেকে আমরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে একমত হলেই নিষিদ্ধ হতে পারে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তবে দুর্দিনে আ.লীগের সাথে আছে কি রাজনৈতিক দলগুলো?
রাজনৈতিক আদর্শে অমিল থাকলেও ফাঁকা মাঠে খেলতে রাজি নয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয় দল দুটি। তাহলে কি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা শুধুই রাজনীতির মাঠের ফাঁকা আওয়াজ?
আপাতত এর জবাবও হ্যাঁ। আপাতত দল হিসেবে আওয়ামী লীগ গণহত্যার দোষে দোষী নয়। তাই এখনও নিষিদ্ধ নয়। তবে নিষিদ্ধ করতে হলে আগে প্রমান করতে হবে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম।