27 C
Dhaka
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ৩০০ প্রবাসীর চিঠি: প্রধান উপদেষ্টার কাছে

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (আ.লীগ) নিষিদ্ধের দাবিতে ৩০০ প্রবাসী বাংলাদেশি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠি প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আ.লীগের শাসনকাল দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিপন্থী হয়ে উঠেছে এবং এর কার্যকলাপের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ই-মেইলে তারা এই চিঠি পাঠান।

প্রবাসীদের পক্ষ থেকে প্রেরিত চিঠিটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে এবং দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আ.লীগের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে। চিঠির অন্যতম দাবি হলো, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়েছে এবং দেশের স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রবাসীরা তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, আওয়ামী লীগের শাসনাধীন বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রায় বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিরোধিতা সহ্য করা হচ্ছে না।

এছাড়া, চিঠিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোরও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা রাজনৈতিক হেনস্তা ও গ্রেফতারের ঘটনা নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে সরকারের বিরোধীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যসূত্র উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সরাসরি রাজনৈতিক নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৮৩৪ জনকে হত্যা এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছেন। দুটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) প্রমাণ পেয়েছে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন দমনে বেআইনিভাবে ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে শক্তির ব্যবহার করেছে।

এছাড়া, প্রবাসীরা তাদের চিঠিতে সরকারের এই আচরণে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তারা আশা করেছিলেন যে বাংলাদেশে প্রবাসীদের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হবে এবং সেখানে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকবে। তবে, তারা অভিযোগ করেছেন যে, বর্তমান সরকারের শাসনামলে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের উপর চেপে বসেছে।

এ বিষয়ে সরকার বা আ.লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের চিঠি আসলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার গভীরতর সংকেত হতে পারে। তারা বলেন, যদি সরকার প্রবাসীদের এই ধরনের অভিযোগের উত্তর না দেয় এবং সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রশমিত না হয়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত করতে পারে।

আওয়ামী

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, শুধু জুলাই হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুই হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। গুম কমিশনের রিপোর্টে উঠে এসেছে কিভাবে ছোট বাচ্চাকে জিম্মি করে মায়ের বুকের দুধ পান করতে না দিয়ে মায়ের উপর নিপীড়ন চালিয়েছে। 

সারাদেশে ৭০০-৮০০ আয়নাঘর তৈরি করে বছরের পর বছর সলিটারি কনফাইনমেন্টে রেখে পাশবিক নিপীড়ন চালিয়েছে অসংখ্য মানুষের উপর। নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনা ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে গুম করেছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ ভুক্তভুগী হয়েছেন (হাসনাত ও মাশাল, ২০২৪)।

আয়নাঘরের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে জানানো হয়, গুম সংক্রান্ত্র কমিশনের রিপোর্ট, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট, ও সম্প্রতি আপনার নেতৃত্বে আয়নাঘর উম্মুক্ত হওয়ার পর মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, হত্যার যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখতে পেয়েছি এরপরে রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বাংলাদেশে চলতে পারে না। আমরা অবিলম্বে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার খুন, গুম, মানবাধিকার লংঘনের দায়ে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানাচ্ছি। ফ্যাসিবাদী দলকে নিষিদ্ধ না করলে গণ-অভ্যুত্থানের আকাংক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। 

বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, আপনি জেনে থাকবেন, সম্প্রতি সিরিয়ায় স্বৈরাচারী আসাদ সরকারের উৎখাতের পর একই ধরণের অভিযোগে আসাদের বাথ পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের জুলুম নিপীড়নের মাত্রা আসাদের চেয়েও ভয়াবহ ছিলো যাকে আপনি ‘আইয়ামে জাহিলিয়াতের’ সাথে তুলনা করেছেন। আমাদের সামনে ফ্যাসিবাদী নাৎসী পার্টিকে নিষিদ্ধ করার উদাহরণও রয়েছে। দুনিয়ার কোথাও বিপ্লবের পরে ফ্যাসিবাদী দলকে রাজনীতি করতে দেয়ার ইতিহাস নেই। 

চিঠিতে আরও বলা হয়, শুধু গুম-খুন নয়, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। এইসব গুম-খুন-নিপীড়ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত এবং একই সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

আওয়ামী লীগ তাদের পরিকল্পিত নিপীড়ন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে তাদের বৈধতা হারিয়েছে। যদি অনতিবিলম্বে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ না করা হয়, তবে তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতৃত্ব, যারা কিনা তাদের জঘন্য অপরাধের জন্য একদমই অনুতপ্ত নয়, তারা আবার বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণ করতে পুনরায় সংগঠিত হবে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- 
ড. শিব্বির আহমদ, ড. মোহাম্মদ তারিক, ড. মারুফ মল্লিক, ড. রাশেদুল ইসলাম, ড. ফয়জুল কবির, ড. মোঃ খালেদ হোসেন, ড. আবু ইউসুফ, ড. এমরান হোসেন, মোঃ ফাহিম শারকার ঈশাত, মোঃ আলী আজম, আব্দুল্লাহ আল জায়েম, মোঃ রেজাউল হক, মোঃ রবিউল ইসলাম, মুনতাসির মাহদী, ফাবিহা তাসনিম অরনী, মুসুন্না গালিব, জাকির হোসেনসহ ৩ শতাধিক প্রবাসী। 

পড়ুন:চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল

দেখুন:সাদ’পন্থীদের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে জামালপুরে মানববন্ধন | 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন