খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন ৩২ শিক্ষার্থী। সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে তারা অনশনে বসেন। অনশনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্য অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, প্রয়োজনে জীবনও দেবেন।
সকালে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা তোষক বিছিয়ে কেউ বসে, কেউ শুয়ে রয়েছেন। পাশে রাখা আছে অ্যাম্বুলেন্স ও স্ট্যান্ড ফ্যান। তারা জানান, রাতভর কিছু খাননি। অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রাহাত, তৌফিক, গালিব, মহিবুজ্জামান উপল ও ওবায়দুল্লাহ। তারা বলেন, ‘৩২ জন শিক্ষার্থীর জীবনের চেয়ে কি ভিসির পদ বড়?’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও বহিরাগতদের হামলার সময় প্রশাসন ব্যর্থ ছিল। হামলাকারীদের নাম না বলেই দায়সারা মামলা করা হয় এবং এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বিপরীতে, আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করা হয় ও ৩৭ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা বলেন, ‘ভিসি বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা হল খোলার দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং ১৫ এপ্রিল নিজেরাই তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন। কিন্তু সেখানে পানীয় জল, খাবার ও ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। ফলে তারা আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে আমরণ অনশন শুরু করতে বাধ্য হন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, ‘আমরা দুইবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা অনড়। আবারও আলোচনার চেষ্টা করা হবে।’ তিনি আরও জানান, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে এবং দায়ের হওয়া মামলাগুলোর ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ভিসির পদত্যাগের জন্য শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর সোমবার বিকেলে তারা অনশনে বসেন। আন্দোলনের সময় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী একত্রিত হন এবং স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে অবস্থান নেন।
এদিকে আন্দোলনকারীরা বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা দাবি করেন, ভিসি বহিরাগতদের প্রশ্রয় দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলেছেন। তাই তার পদত্যাগ ছাড়া সংকটের সমাধান হবে না।
প্রসঙ্গত, সহিংসতার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয় এবং শিক্ষা কার্যক্রম ৪ মে, হল খোলার তারিখ ২ মে নির্ধারণ করা হয়। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পড়ুন: কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন শুরু
দেখুন: বিয়ের দাবিতে যুবকের বাড়িতে দুই সন্তানের জননীর অনশন! |
ইম/