১৯/০৫/২০২৫, ০:৫১ পূর্বাহ্ণ
25.4 C
Dhaka
১৯/০৫/২০২৫, ০:৫১ পূর্বাহ্ণ

আলমডাঙ্গা থানায় আটক যুবককে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজির

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে একজন যুবককে আটক করে অমানবিক নির্যাতন, তার কাছে থাকা অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী জব্দ এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আদালতে উপস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী যুবকের মা মোছাঃ ফজিলা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাদ্দামের মেজো বোন মোছাঃ রেশমা খাতুন। তিনি জানান, তার ভাই পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম (৩০) ৭ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১০:৩০ মিনিটে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাড়গাড়ী বিল এলাকায় মাছ চাষের কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুর রহমান, এসআই সামসুলসহ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে আটক করেন।

রেশমা খাতুন জানান, “আমার ভাইয়ের কাছে মাছ বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, একটি রুপার চেইন ও একটি রুপার ব্যাসলেট ছিল। পুলিশ চোখ-মুখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে তাকে ঘোরায় এবং পরে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকাল ৯টায় থানায় গিয়ে খোঁজ নিলে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি। পরে সকাল ১০:৩০টায় তাকে গুরুতর আহত ও মৃতপ্রায় অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয়।”

অভিযোগ করা হয়, পরে পুলিশ দাবি করে সাদ্দামকে দুর্লভপুর গ্রামের একটি ফার্ম থেকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। রেশমা খাতুন বলেন, “পুরো হাড়গাড়ী গ্রাম দেখেছে তাকে কোথা থেকে ধরা হয়েছে, অথচ মামলায় ভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে মা ফজিলা খাতুন বলেন, তার ছেলে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যুক্ত এবং দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “সরকারি দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি পুরোনো ও অপ্রাসঙ্গিক মামলাও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবার গ্রেপ্তারের পর নতুন নতুন মামলা দিয়ে তাকে সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আগেও ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়েছে, অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। বহু রাত আমরা আতঙ্কে ঘুমাতে পারিনি। আমার ছেলে কোনো অপরাধী নয়—সে একজন রাজনৈতিক কর্মী।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফজিলা খাতুন বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক ভাষা জানি না। আমি শুধু জানি, আমার ছেলে নিরপরাধ। আমি একজন মা হিসেবে ন্যায়বিচার চাই।”

সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দামের মা ফজিলা খাতুন, মেজো বোন রেশমা খাতুন, স্ত্রী ঝুমুর খাতুন, কন্যা রোদেলা এবং পুত্র আব্রাহাম উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে সাদ্দামসহ তার সহযোগীকে গ্রেফতার করি। একইসাথে সকল আইনী প্রক্রিয়া মেনে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় পুলিশ অস্ত্র

ও মাদকসহ ২৫ মামলার আসামি পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম (৩২) এবং তার সহযোগী আতাউর রহমান রকি (৩৭) গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে সাদ্দামের নিজ মুরগি ফার্ম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান (পিস্তল), একটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, ৫২ পিস নিষিদ্ধ ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, এবং দুটি মোটরসাইকেল—একটি রেজিস্ট্রেশন বিহীন ১২৫ সিসি টিভিএস রাইডার ও একটি ইয়ামাহা আরএক্স উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে এবং তার সহযোগী আতাউর রহমান রকি আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাজারপাড়ার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। পুলিশ জানায়, সাদ্দামের বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মোট ২৪টি মামলা রয়েছে। এছাড়া রকির বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা রয়েছে।

পড়ুন: তামিম ইকবালকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনলেন চুয়াডাঙ্গার ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ

দেখুন: নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের প্রাচীন ও দোতলা রেলস্টেশনটি |

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন