সৌদি আরবের জেদ্দায় ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আলোচনায় ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে যুদ্ধবিরতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
গত সোমবার, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেন। সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তার বৈঠকের পাশাপাশি, তিনি মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন না। বৈঠকে রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি থাকছে না, যা ইঙ্গিত দেয় যে, এই আলোচনা শুধুমাত্র ইউক্রেন ও মার্কিন প্রতিনিধিদের মধ্যে হবে।
আগে, মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তারা আলোচনা করলেও, তাতে কিয়েভের কোনো প্রতিনিধি ছিল না। গত কয়েক মাসে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, যা সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা স্থগিত করার দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এবার এই দুই দেশ প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা চাচ্ছেন দেখতে, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির জন্য কতটা প্রস্তুত এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইতোমধ্যে জানিয়েছেন যে, যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়া নিশ্চয়তা দিতে হবে যে তারা ভবিষ্যতে আর কখনো এমন হামলা চালাবে না। তবে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমঝোতা এখনো হয়নি।

জেলেনস্কি বলেন, তিনি মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন না। তবে, ইউক্রেনের চিফ অব স্টাফ, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, “আমরা গঠনমূলক আলোচনায় অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আশাবাদী যে, আলোচনা দ্রুত ও কার্যকরভাবে এগিয়ে যাবে, যদি টেবিলে বাস্তবিক প্রস্তাব থাকে।”
এই আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে কিছু বাস্তবিক সমঝোতা করা। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা দেখতে চান ইউক্রেন শান্তি চায় কি না এবং তাদের দাবি কতটা বাস্তবসম্মত।
এদিকে, গতকাল রবিবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ আবার শুরু হচ্ছে, যা সম্প্রতি স্থগিত করা হয়েছিল।
তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কিছু শর্ত রেখেছেন। তিনি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে যুদ্ধবিরতি আকাশ ও সাগরের ওপর হতে পারে, এবং বন্দিবিনিময় করা হবে। রাশিয়া এই সাময়িক যুদ্ধবিরতির ধারণাকে অস্বীকার করেছে।
এছাড়া, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন, তাদের মতে, ইসরায়েল ও রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
এদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিহিবা জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং তার দাবি, ইউক্রেন আর কোনো দেশের মতো যুদ্ধ শেষ করতে চায় না।
এ আলোচনা চলাকালে, ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং এতে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, এবং এর মধ্যে কিছু শিশু নিহত হয়েছে।
অবশ্য, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তারা শান্তির জন্য নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং জেদ্দা আলোচনা সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে।
পড়ুন : ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, নিহত অন্তত ২৫
দেখুন : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কে জিতবে?
ইম/