১৫/০৭/২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ
30.3 C
Dhaka
১৫/০৭/২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে কে জিতলো কে হারলো?

১২ দিনের ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে অবশেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মঞ্চে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং ইরান-তিন পক্ষই নিজেদের জয় দাবি করলেও বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, এই সংঘাত থেকে আদতে কে কী পেল? এবং সত্যিকার অর্থে ‘জয়ী’ বলতে কাকে বোঝাবে ইতিহাস? ইসরায়েলের গোপন অভিযান, কমান্ডার হত্যা ও বেসামরিক এলাকাগুলোতে ইরানের সামরিক উপস্থিতি ধ্বংসের মাধ্যমে যুদ্ধের সূচনা ঘটে। পাল্টা জবাব আসে ইরানের পক্ষ থেকে। তেহরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেয় বার্তা-এই লড়াইয়ে তারা নিষ্ক্রিয় নয়, বরং প্রতিশোধপরায়ণ।

যুক্তরাষ্ট্র: শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি

যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে ইরানের সামরিক সামর্থ্যের বড় ক্ষতি হয়। তবে এই হঠাৎ আগ্রাসনের পর ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে অনেকে একপ্রকার কৌশলগত পলায়নও মনে করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের চাপে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু করলেও, এ যুদ্ধে বৃহৎ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের লাভ-বিনা প্রাণহানিতে ‘পাওয়ার প্রজেকশন’।

ইসরায়েল: সাময়িক কৌশলগত জয়

যুদ্ধ শুরু করেছিল ইসরায়েল। একের পর এক টার্গেটেড অপারেশনে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা অফিসারদের হত্যা করে তারা। তেল আবিবে নেতৃত্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, এই হত্যাকাণ্ড এবং তৎপরতায় ইসরায়েল দেখিয়েছে-তারা হামলার আগেই জয়ের ভিত গড়ে নেয়। এর বাইরেও এই যুদ্ধ নেতানিয়াহুর জন্য এক রাজনৈতিক পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। দেশে যুদ্ধকালীন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, জাতীয়তাবাদী আবেগ উস্কে দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা, এসবই ছিলো যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৌশলগত উদ্দেশ্য। তবে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং যুদ্ধবিরতির ঘোষণা-সব মিলিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধ থামিয়ে ‘এক্সিট স্ট্র্যাটেজি’য়েই ফিরে এসেছে।

ইরান: পাল্টা জবাব আর মর্যাদা রক্ষা

যুদ্ধের শুরুতে কিছুটা কোণঠাসা থাকলেও, ইরান শক্ত বার্তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালিয়ে তারা দেখিয়েছে-বিপদে পড়লে তারাও জবাব দিতে জানে। কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে সরাসরি হামলা চালানোর আগে আগাম সতর্কতা দিয়ে ইরান একদিকে নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকতা রক্ষা করেছে, আবার জনগণের কাছে ‘পালিয়ে না গিয়ে লড়েছে’ এই বার্তাও নিশ্চিত করেছে।

যুদ্ধবিরতির আগে ইরানের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র অন্তত ১০টি ইসরায়েলি শহরে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত ইরানকে হয়তো আরও গোপনে পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করবে। তাই সামরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, কৌশলগতভাবে ইরানও পিছু হটেনি।

শেষ পর্যন্ত জয় কার?

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে কে জিতলো কে হারলো?

এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর মেলে না। কারণ, কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে পুরোপুরি পিছু হটেনি, আবার নিরঙ্কুশভাবে কাউকে বিজয়ীও বলা যাচ্ছে না। বরং এটা বলা যায়, যুদ্ধ থেমেছে; কিন্তু উত্তেজনার আগুন নিভেনি।

এই সংঘাত ইসরায়েলকে স্বস্তি দিলেও, ভবিষ্যতে আরও বড় আঘাতের ঝুঁকি রেখে গেল। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ক্ষয়ক্ষতির বাইরে থেকেছে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আরও হ্রাস পেয়েছে। আর ইরান-যদিও সামরিকভাবে দুর্বল, কিন্তু ‘প্রতিশোধ নেয়া’ এই বার্তার মাধ্যমে ভেতরের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে।

এই যুদ্ধের ‘বিজয়ী’ আসলে কেউই নয়। বরং তিন পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান রক্ষা করেছে। ইরান মর্যাদা, ইসরায়েল কৌশল, আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের আধিপত্য-এই তিনের লড়াই আবারও প্রমাণ করলো, আধুনিক যুদ্ধ শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক জয়েরও মঞ্চ।

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন