দীর্ঘ প্রায় এক দশক কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি তরুণ আহমেদ মানাসরা। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাকে নাফা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। আহমেদ যখন গ্রেফতার হন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এখন তার বয়স ২৩। কারাগার থেকে মুক্তির সময় তাকে পরিবারের কাছ থেকে দূরে নামিয়ে দেওয়া হয়, তবে বেয়ারশেবার এক ফিলিস্তিনি নাগরিক তার খোঁজ পেয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আহমেদ মানাসরার জন্ম ২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি, জেরুজালেমে। তিনি দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার বড়। ২০১৫ সালে ইসরাইলি বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, আহমেদ ও তার চাচাতো ভাই হাসান মানাসরা জেরুজালেমে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে সেনাদের গুলিতে হাসান নিহত হন এবং আহমেদ গুরুতর আহত অবস্থায় আটক হন।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা আহমেদকে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী ঘিরে রেখেছে এবং পথচারীরা তাকে গালাগাল করছেন। ভিডিওটি ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়, বিশেষ করে আরব বিশ্বে। অনেকেই প্রথমে ভেবেছিলেন, আহমেদ ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।

পরে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আহমেদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে সাড়ে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
একইসঙ্গে প্রায় ৪৭ হাজার মার্কিন ডলারের জরিমানা আরোপ করা হয়, যা তার পরিবার পরিশোধে হিমশিম খায়। কারাগারে কঠোর পরিবেশে থাকতে থাকতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আহমেদ। এক পর্যায়ে তার স্কিজোফ্রেনিয়া ও তীব্র বিষণ্ণতা ধরা পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়, যা তার মানসিক স্বাস্থ্য আরও খারাপ করে তোলে।
মানাসরার মুক্তির জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাকে “মানসিক নির্যাতনের শিকার” বলে উল্লেখ করে। তবে সন্ত্রাসী অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় তার আগাম মুক্তির আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
মুক্তির পর তার পরিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি এবং ইসরাইলি এনজিও আদালাহ অভিযোগ করেছে, আহমেদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।
পড়ুন: ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মাধবদীতে বিক্ষোভ
দেখুন: কাতার বিশ্বকাপে ইসরাইলকে হারালো ফিলিস্তিনি!
ইম/