26.5 C
Dhaka
সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫

ইসরায়েলের আক্রমণ নিয়ে নেতানিয়াহু বললেন ‘কেবল মাত্র শুরু’

ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোররাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আকস্মিকভাবে গাজার বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে বোমা হামলা চালায়। পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় সেহরি খাচ্ছিলেন অনেক লোক, তখনই বিস্ফোরণ শুরু হয়। এই বর্বর হামলায় অন্তত ৪০৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৫৬২ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক, এবং কিছু মানুষ ভবন ধসে আটকে আছেন। এই হামলার পর, গাজার পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে।

গাজার সবচেয়ে বড় বিমান হামলা হিসেবে এটি চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ। এই হামলার পর, একের পর এক ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, যারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ঘরবাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। এই হামলায় পবিত্র রমজান মাসের প্রথমভাগে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, এবং এটি সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলা সম্পর্কে একটি টেলিভিশন ভাষণে দাবি করেন,

এই হামলা ছিল একটি ‘শুরু’। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা পুনরায় শুরু হয়েছে এবং এটি ‘কেবল মাত্র শুরু’। নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে আক্রমণ আরও তীব্র হতে পারে। তার ভাষায়, “আমরা যুদ্ধবিরতি কয়েক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছিলাম, কিন্তু বিনিময়ে আমাদের কোনো বন্দি মুক্তি পাওয়া যায়নি।” তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, কিন্তু হামাস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ একটি প্রস্তাব উভয় পক্ষের কাছে পেশ করেছিলেন, যেখানে ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল, যেমন পাঁচজন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার। তবে হামাস এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেও যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য কিছু শর্ত রেখেছিল। তারা এক ইসরায়েলি-আমেরিকান সৈন্যের মুক্তি এবং চার দ্বৈত নাগরিকের মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছিল।

তবে, নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসের পক্ষ থেকে বন্দিদের মুক্তি না দেওয়ার পর ইসরায়েল আবার হামলা চালিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, হামাসের সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর ইসরায়েল পুনরায় যুদ্ধের পথে অগ্রসর হয়েছে। এই হামলার পর গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, এবং ভবিষ্যতে আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

গাজার এই হামলার পর, আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইসরায়েলের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের উপর সহিংসতা বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। গাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলি দ্রুত সহায়তা পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনও যুদ্ধবিরতি বা কোনো আলোচনার লক্ষ্যে কোনো উদ্যোগ নেয়ার সঙ্কেত দেয়নি।

গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, এবং মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। সামরিক বাহিনী এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ একে অপরকে অভিযুক্ত করছে, তবে গাজার সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের জীবন রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে। আন্তর্জাতিক মহলে এ বিষয়ে একযোগভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষা হয় এবং শান্তির আলোচনা পুনরায় শুরু হয়।

এই হামলা গাজার শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য এক বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহিংসতা অব্যাহত থাকলে, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কেবল গাজার মানুষকেই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।

পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের বিমান হামলা, নিহত দুই শতাধিক

দেখুন: মিশরের সেনাবাহিনী কি ই/স/রা/ইলে আ/ক্র/ম/ণ করবে? 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন