০৮/০৭/২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ
25.1 C
Dhaka
০৮/০৭/২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

ঈদ যাত্রায় সঙ্গী ভোগান্তি ও যানজট, কোথাও আছে স্বস্তি

পবিত্র ঈদুল আজহা শনিবার। ঈদের ছুটি প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটাতে বুধবার রাত থেকেই হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। ঢাকা থেকে ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও কোনো কোনো মহাসড়কে যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। হঠাৎ করেই অনেক মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ায় গাড়ি সংকটে পড়তে হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ির অপেক্ষা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি কোনো কোনো মহাসড়কে স্বস্তির যাত্রা দেখা গেছে। তাই এবারের ঈদ যাত্রা ভোগান্তি, যানজট ও স্বস্তি এক কাতারে মিলে গেছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট

ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে অন্তত ২৫ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাস স্টেশন, রাবনা বাইপাস, আশেকপুর বাইপাস ঘুরে দেখা যায়, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে আছেন। যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, পিকআপ, বিভিন্ন সড়কের লোকাল বাস, লেগুনায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কে বাসের চেয়ে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল বেশি দেখা গেছে। এছাড়াও বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রী পরিবহন করছে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপ ও বাসের ছাদে গন্তব্যে যাচ্ছেন।


চালক ও যাত্রীরা জানান, ভোররাত থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনের পাকুল্যা থেকে টাঙ্গাইলগামী সড়কে  এই যানজট সৃষ্টি হয়। পরে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাস থেকে সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক যাত্রী ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রা

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হয়েছে আজ। ঈদের ছুটিতে ঘরে ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা এসব মানুষের চাপ বাড়লেও, কোনো যানজট ছাড়া পথ পাড়ি দিচ্ছেন তারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেই যানজট কিংবা ধীরগতি।


মহাসড়কে যাতায়াতকারী চালক ও যাত্রীরা জানান, মহাসড়কের ঢাকা থেকে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সামান্য কিছু যানজট আছে। তবে নারায়ণগঞ্জের পরে মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা অংশ পুরোটাই ফাঁকা রয়েছে। খুব অনায়াসেই গাড়িগুলো গন্তব্যে যাচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর এই যানজট শুরু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এতে ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়ি ফেরা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সকালে ভাটিয়ারী এলাকায় ঢাকামুখী লেনে একটি ট্রাকের পেছনে পরপর দুটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময়ের জন্য মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো সরিয়ে নেয়। এরপর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে তার জেরে তৈরি হওয়া যানজট যাত্রীদের ভোগাচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক : অপেক্ষা আর ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ

ঈদের ছুটি শুরু হতেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষজন। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল থেকেই মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। কিন্তু বাস না পেয়ে অনেককে বসে থাকতে হয়েছে সড়কের পাশে।


ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে, ফুটপাতে, এমনকি ডিভাইডারের ওপরে বসে আছেন মানুষজন। নারী ও শিশুরা বেশিরভাগই বসে ছিলেন। যাদের অনেকেই জানালেন, তাদের বাস ছাড়ার কথা ছিল সকাল আটটায়, কিন্তু এখনো বাসের দেখা নেই।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, সকাল থেকেই রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রায় প্রতিটি অংশেই থেমে থেমে যানজট। কোথাও কোথাও পুরোপুরি স্থবির হয়ে ছিল যান চলাচল। বিশেষ করে টঙ্গী, কলেজ গেট, গাজীপুর চৌরাস্তা ও বোর্ডবাজার এলাকায় ছিল তীব্র যানজট।

সড়কে গন্তব্যের বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকারের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। কিছু কিছু গাড়ি এক জায়গায় দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসের যাত্রীদের অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁটেই সামনে এগোতেও দেখা যায়।
অন্যদিকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট আরও বাড়তে দেখা গেছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা। তারা জানান, বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন এবং রাস্তার পাশে যাত্রী ওঠানামা যানজটের অন্যতম কারণ।

সাভারে তিন সড়কে যানজট, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ

সাভারে মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে ৯ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঈদযাত্রায় মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর থেকে জোরপুর এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল ও বাড়ইপাড়া এবং ডিইপিজেড-আশুলিয়া সড়কের বাইপাইল থেকে ইউনিক বাসস্ট্যান্ড ও জামগড়া এলাকায় যানজট দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়াপুর থেকে জোরপুর প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী থেকে জিরানী প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ডিইপিজেড-আশুলিয়া সড়কের বাইপাইল থেকে ইউনিক বাসস্ট্যান্ড ও জামগড়া এলাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কে গাড়ির জটলা রয়েছে। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উলাইল, গেন্ডা, সাভার বাসস্ট্যান্ড ও নবীনগরের চিত্র স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের শ্রীপুর, পল্লীবিদ্যুৎ নবীনগরে যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে যানজট-ধীরগতি

ঈদযাত্রার চাপ সামলাতে যমুনা সেতুতে ঢাকাগামী লেনে টোল আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ফলে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বেলা সাড়ে ১১টা পশ্চিম পাড়ে যানজট হয়েছে। সায়দাবাদ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। যার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

উত্তরবঙ্গমুখী যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় শুধু উত্তরমুখী লেনে টোল আদায় চালু রাখা হয়েছিল। কারণ এই লেনের যানবাহন ও যাত্রীর চাপ তুলনামূলক বেশি। তবে ৪০ মিনিট পরেই ঢাকামুখী টোল আদায় শুরু হয়েছে।

যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ সময় টোল আদায় বন্ধ থাকার পর পুনরায় টোল আদায় শুরু হলে যানজট কিছুটা কমলেও যান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। চলছে থেমে থেমে। এতে করে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

পড়ুন : মধ্যরাতের ঈদযাত্রায় ভোগান্তির নাম যানজট

পড়ুন : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে ঈদযাত্রায় স্বস্তি, নেই যানজট

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন