ঈদ যাত্রার শেষ দিনেও ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী যাত্রীরা। শত কষ্ট উপেক্ষা করেও বাসের ছাদে ও খোলা ট্রাক-পিকআপে করে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন সবাই।
ঈদ যাত্রার শেষ দিনে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকেই যানবাহন ও মানুষের ঢল নেমেছে। গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে স্বল্প সময়ের যানজট ও ধীরগতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। পরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় ট্রাক-পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ।
রাজধানীর প্রধান প্রধান বাস টার্মিনালে ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল দেখা যায়। ব্যতিক্রম নয় এবারের ঈদেও। শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহা উদযাপনে ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকেই রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের ঢল। সকাল ৭টা থেকেই যাত্রীরা দলে দলে টার্মিনালে ভিড় করতে শুরু করেন। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ একা ছুটছেন প্রিয়জনের কাছে ঈদ উদযাপন করতে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার যানজট
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের সেতু এলাকা থেকে করটিয়া করাতিপাড়া বাইপাস পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, সেতুর উপর গাড়ি বিকল হওযাসহ বিভিন্ন কারণে বুধবার (৪ জুন) ভোর ৪টা থেকে শুরু হওয়া এই যানজট শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও অব্যহত রয়েছে।

এলেঙ্গা বাস স্টেশন, রাবনা বাইপাস, আশেকপুর বাইপাস ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও ট্রাক, পিকআপ, বিভিন্ন সড়কের লোকাল বাস, লেগুনায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কে বাসের চেয়ে ট্রাক ও পিকআপ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপ ও বাসের ছাদে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
পুলিশ, চালক ও যাত্রীরা জানান, দুই ঘণ্টার রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বিকল হওয়া ও দুর্ঘটনার ফলে এই ভোগান্তি। অন্যদিকে যমুনা সেতুর ধারণক্ষমতা কম থাকায় স্বাভাবিকভাবে গাড়ি পারাপার করতে পারছে না। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী গাড়িগুলো ভূঞাপুর দিয়ে ঘুরিয়ে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
গাজীপুরের দুই মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল, পরিবহন সংকটে ভোগান্তি
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের ঢল নামে। দূরপাল্লার পরিবহন সংকটের কারণে খোলা ট্রাক, কভার্ডভ্যান, পিকআপ, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যে যেভাবে পারছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টা, বেলা ১১টা ও সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ে খোলা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপে চলাচলকারী যাত্রীদের। বিশেষ করে ভোগান্তিতে পড়েন নারী ও শিশুরা।

এছাড়াও স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস, মিনিবাস দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন করছে। মহাসড়কের বিভিন্ন বাস স্টপেজ, মোড় ও জনাকীর্ণ স্থানে আইন না মেনে যাত্রী তুলছেন ট্রাকচালকরা। এতে মহাসড়ক স্বল্প সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।
অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সকালে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তা বেলা বাড়ার সাথে অনেকটা কেটে গেলেও এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আছে মহাসড়কে যান চলাচল। মহাসড়কে স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহন চলাচল করায় বিভিন্ন পয়েন্টে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। বুধবার রাতে যানজটে আটকে বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে দেরিতে পৌঁছা বাসগুলো ৮-১০ ঘণ্টা পর ঢাকায় ফিরেছে। বৃহস্পতিবারের কাউন্টারের বাসগুলো নির্দিষ্ট সময়ের চাইতেও কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে গেছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে সময় মতো গাড়ি না আসায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে যারা যেতে পারেননি তাদের অনেকের রাত কেটেছে সড়ক ও বাস কাউন্টারে। টিকিট কাটার পরও যাত্রা বাতিল করেছেন অনেকে।
পাটুরিয়া ঘাট এলাকায়ও নেই স্বস্তির ছাপ। ঈদযাত্রার শেষ দিনে কয়েক কিলোমিটার যানজটে যাত্রী ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটে ২৩টি ফেরি থাকলেও যানবাহন চাপে হিমশিম অবস্থা।
এদিকে, মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করে বাড়তি ভাড়া নিলে বাসের রুট পারমিট বাতিলের হুঁশিয়ারি দেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।