মনোবল ও দায়িত্ববোধ থেকে একাই ৫ জনের সংসারের ঘানি টানছেন দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো চাঁদপুরের রফিজ উদ্দিন(৫২)। তিনি একটি ভাঙ্গা হুইল চেয়ারে লঞ্চঘাটে বসে নিয়মিত বোতলভর্তি পানি বিক্রি করেন।
১৩ জুন শুক্রবার মেঘাচ্ছন্ন দুপুরে তাকে নানা দামের পানি বিক্রি করতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, রফিজ উদ্দিন হচ্ছেন চাঁদপুর পৌর ৭নং ওয়ার্ডের টিলাবাড়ী এলাকার মৃত আজিজ মাঝি ও মৃত আনোয়ারা খাতুনের বড় ছেলে। সে ছোট বেলা হতে লঞ্চঘাটে হকারি ব্যবসায় জড়িত। এই কাজের আয় হতেই নিজের আদরের ছোট বোন মাজেদা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে রফিজ এখানে একটি টিনশেড ঘরে পরিবারসহ ভাড়া থাকেন।

রফিজ উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন কয়েকটি প্লাস্টিকের ঝুড়িতে পানির বোতল বিক্রি করছি। দিনে সকাল ১০টা হতে বিকাল ৩টা এবং রাতে সন্ধ্যা হতে রাত ১২টা পর্যন্ত এই লঞ্চঘাটেই বসি। মানুষজন লঞ্চে যাতায়াতকালে আমার থেকে পানির বোতল কিনে নেন। এতে দিনে গড়ে ৬-৭শ’ টাকা আমার লাভ হচ্ছে। এই দিয়েই আমি আমার সংসার পরিচালনা করছি।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ভানু বেগমের ডায়াবেটিস হতে বাম পা অকেজো হয়ে গেছে। বড় ছেলে বাদশা মাঝী(২৫) কে বিয়ে করালেও সে বেকার অবস্থায় রয়েছে। ছোট ছেলে শাহাদাত মাঝী(২০) বড়ষ্টেশন মোলহেডে ফটোগ্রাফারি করে কিছু আয় করার চেষ্টা করছে। এক মেয়ে মানসুরা খাতুন(১৩) আক্কাস আলী স্কুলে পড়ালেখা করছে। এই পুরো পরিবারের চিকিৎসা খরছ, মেয়ের পড়ালেখার খরছসহ যাবতীয় খরছ আমাকে একাই বহন করতে হচ্ছে।
দুঃখের ইতিহাস বলতে গিয়ে রফিজ উদ্দিন বলেন, আমি লঞ্চঘাটে হাতে করে হকার হিসেবে কলা রুটি সিগারেট বিক্রি করতাম। ১৯৯৫ সালে লঞ্চ থেকে হাতে করে কলা নিয়ে নামার সময় অসাবধনায় পুরাতন বড়ষ্টেশন এলাকার লঞ্চঘাটে দুই লঞ্চের মাঝে পড়ে পা দুটো থেতলে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমাকে বাঁচাতে পা দু’টো আলাদা করতে কেটে ফেলা হয়। তবে পরিবারে আমাদের কেউ দেখার মতো না থাকায় ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজের মনবোল নিয়ে একটি হুইল চেয়ার নিয়ে লঞ্চঘাটে পানি বিক্রি করছি। দিনে কয়েক হাজার টাকার পানি ক্রয় করে এখন এখানেই এই অবস্থাতেই পানি বেচাবিক্রি করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে একটি নতুন হুইল চেয়ার ও কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে উপকৃত হতাম।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন নন্দীকে অবগত করলে তিনি বলেন, রফিজ উদ্দিন নিজের ভোটার আইডি কার্ড, তার পুরো শরীরের ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে এলে আমরা তাকে যতদ্রুত সম্ভব নতুন একটি ট্রাই সাইকেল বা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিবো। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যপারটি নিয়েও আমরা কাজ করবো। এরূপ মানুষের সেবাতেই কাজ করছি আমরা।