একদিকে মুসলিম দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়ন, অন্যদিকে ইসরায়েল এর সাথে সম্পর্কের অবনতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ভোলবদল সাড়া ফেলেছে আন্তর্জাতিক মহলে।
মুসলিম দেশগুলোর সাথে বরাবরই বেশ খারাপ সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ পশ্চিমা দেশগুলোর। বিশেষ করে ইরান, সৌদি আরবসহ বেশ কিছু দেশ এর সাথে বরাবরই দা-কুমড়ো সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলোর মুসলিম-বিদ্বেষী মনোভাবই এর সবচেয়ে বড় কারন।
অন্যদিকে ইসরায়েল এর সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মার্কিন সরকারের। ফিলিস্তিনের গাজায় চালানো গণহত্যা ও বর্বরতায় ইসরায়েলের পাশে ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। তবে হুট করেই দুই মিত্র রাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে।
হুতি বিদ্রোহী ও হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় এবং হামলা বন্ধ নিয়ে আলোচনায় ইসরায়েলকে সম্পূর্ণভাবে বাইরে রেখেছে ট্রাম্প। অন্যদিকে গাজা থেকে সর্বশেষ জীবিত মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেয়ার ঘটনাকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সদিচ্ছার একটি পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা যুদ্ধ বন্ধের এবং বাকি সব জিম্মিকে মুক্ত করার পথে একটি অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেন।
এর আগে গত ৯ মে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ থেকে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বাড়তে থাকা হতাশা ও দূরত্ব স্পষ্ট। ইসরায়েল হায়োম পত্রিকা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বর্তমানে নেতানিয়াহুর ওপর ‘হতাশ’। তিনি ভবিষ্যতে নেতানিয়াহুর অংশগ্রহণ ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চান।
অন্যদিকে সৌদি আরবের সাথে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। গত মঙ্গলবার সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এর সাথে আলোচনায় বসতে রিয়াদ সফরে যান তিনি। জানা গেছে দুই দেশের বাণিজ্য চুক্তিই ট্রাম্পের সৌদি সফরের শীর্ষ কারন।
ট্রাম্প-প্রিন্সের আলোচনার শীর্ষে থাকছে বাণিজ্য চুক্তি। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে ক্রাউন প্রিন্স সালমান। অন্যদিকে ট্রাম্প চান সৌদি আরব এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করুক। তবে ঠিক কতটা বিনিয়োগ হবে, মূলত তা নিয়েই আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও দুই দেশের মাঝে মধ্যে প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনবে ইসরায়েল। এ থেকে বোঝাই যাচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ জোড়দার হচ্ছে।
অথচ কয়েক বছর আগেই দুই দেশের মধ্যে দা-কুমড়ো সম্পর্ক ছিলো। প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ট্রাম্প ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট এর সাংবাদিক জামাল খাশোগজিকে হত্যার পর সৌদি আরবকে “একঘরে” রাষ্ট্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পকে রাজার বেগুনি কার্পেটে স্বাগত জানানো সেই ক্রাউন প্রিন্সই সাংবাদিক খাশোগজিকে হত্যা ও বন্দির আদেশ দিয়েছিলেন।
একসময় যেই দেশের প্রিন্সের আদেশে সাংবাদিক হত্যার জন্য দেশকেই একঘরে করতে চেয়েছিলেন, এখন সেই প্রিন্সের সাজানো বেগুনি কার্পেট দিয়ে হেটে তার অভ্যর্থনা গ্রহণ করছেন।
একদিকে চিরমিত্র ইসরায়েলের দিক থেকে মুখ ফেরানো, অন্যদিকে মুসলিম দেশ সৌদিআরবেন সাথে বন্ধুত্ব, ট্রাম্পের ভেরবদল সম্পর্ক সামনে কোনদিকে মোড় নিবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এনএ/