ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর চিরবৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে নয়াদিল্লি। বুধবার ভারতের মন্ত্রিপরিষদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার ভারতীয় মেডিকেল ভিসা-সহ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে ভারত।
এছাড়াও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ ঘোষণা করেন ভারত। এগুলো হলো—
১. সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তিতে স্থগিতাদেশ
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে বহমান সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তিতে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল পানি বণ্টন চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভারত-পাকিস্তানের এই চুক্তিকে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বুধবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যত দিন পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার না করছে, ততদিন এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।
২. আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ
পাঞ্জাবের আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্ত ক্রসিং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের যেসব নাগরিক এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং বর্তমানে অবস্থান করছেন, তাদেরকে আগামী ১ মে’ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যে এই সীমান্ত দিয়েই ফিরে যেতে হবে তাদের।
৩. পাকিস্তানির জন্য বন্ধ সার্ক ভিসা
‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ (এসভিইএস)-এর অধীনে কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে আর ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অতীতে এই ভিসায় প্রবেশের জন্য যত পাকিস্তানিদের যত অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সব বাতিল করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই ভিসা প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত পাকিস্তানি এখন ভারতে আছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দেশ ছাড়তে হবে।
উল্লেখ্য, এসভিইএস হল ‘সার্ক’-এর দেশগুলির (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মলদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা) মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বিশেষ চুক্তি, যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভিসা ছাড়াও এই সাত দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন নাগরিকেরা। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই অনুমতি তুলে নিচ্ছে ভারত।
৪. দূতাবাস থেকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার
ইসলামাবাদে উপস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা এবং বিমান বাহিনীর উপদেষ্টাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত। তাদের সহকারীদেরও ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা এবং বিমান বাহিনীর উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ভারত ছাড়ার জন্য তাদের এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
৫. ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা হ্রাস
ইসলামবাদে ভারতীয় দূতাবাসের সদস্য সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে। ১ মে ২০২৫ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
পড়ুন : ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের শঙ্কা