১৪/০৬/২০২৫, ১৪:১৬ অপরাহ্ণ
35.3 C
Dhaka
১৪/০৬/২০২৫, ১৪:১৬ অপরাহ্ণ

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বন্ধ সিসিইউ, থেমে যাবার পথে সিসিইউ

অর্থ সংকট পড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গারসহ কক্সবাজার জেলার ৩৭ লাখ মানুষের প্রধান সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বিশেষায়িত বিভাগ সিসিইউ বন্ধ হয়ে গেছে! ৮ মে আনুষ্ঠানিকভাবে সিসিইউ বন্ধ ঘোষণা করে হাসপাতারল কর্তৃপক্ষ। এমনকি একই সমস্যা নিয়ে বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে আইসিও বিভাগও। মূলত অর্থ জোগানদাতা এনজিও অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সত্যতা নিশ্চিত করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো জানান, অর্থ জোগানদাতা সংস্থা অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়ায় সিসিইউ বিভাগ ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি এর আগে গত ৫ মে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন। আইসিও বিভাগ একই সমস্যা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে তত্ত্বাবধায়ক।

হাসপাতালের দাপ্তরিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয় জনগণের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও জেলার হাসপাতাল ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সহায়তা কার্যক্রম চালু করে। এর আওতায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চালু হয় আইসিইউ, সিসিইউ, জরুরি প্রসূতি এবং শিশু সুরক্ষা সেবা। কিন্তু গত প্রায় ১০ মাস ধরে এনজিও সংস্থাগুলো অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়। তারপরও টানা ৯ মাস ধরে ৩০ জন চিকিৎসক ও ১৩০ জন কর্মী বিনা বেতনে সেবা দিয়ে বিভাগটি চালু রাখেন। তবে পুরো অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুরো বিভাগটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প’ (এইচজিএসপি)-এর আওতায় এনজিওগুলোর মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারি জনবল ছাড়াও সদর হাসপাতালে ১৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিযুক্ত হন। তবে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হয়ে যায়। এরপর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ ও সরকারি হস্তক্ষেপে মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

এই বিষয়ে ডা. মং টিং ঞো জানান, প্রকল্পের পর আইএসও নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নতুন প্রকল্প অনুমোদনের আশ্বাস পাওয়া যায়। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আইসিইউ, সিসিইউসহ বিশেষায়িত বিভাগ চালু রাখা হয়। এতে ৩০ জন চিকিৎসক ও ১০০ জন কর্মী বিনা বেতনে সেবা দিয়ে আসছিলেন।

তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, ‘বিশেষায়িত বিভাগগুলো এনজিও নির্ভর। এগুলো সরকারি ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালের অধিভুক্ত নয়। গত জুনে প্রকল্প শেষ হয়, পরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলেও এরপর আর কোনো অর্থায়ন আসেনি। তারপরও চিকিৎসক ও কর্মচারীরা বিনা বেতনে কাজ করে এতদিন টিকিয়ে রেখেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রকল্প আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। অনেকেই এরমধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। সিসিইউ ডাক্তার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে, আইসিইউ এখনো চালু আছে, তবে সেটিও যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের প্রায় ২৫ লাখ মানুষের পাশাপাশি ২০১৭ সালে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা ও প্রতিবছর আগত কয়েক লাখ পর্যটকের জন্য ২৫০ শয্যার এই সদর হাসপাতালই আধুনিক চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। অথচ ৩২৮টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৭৬টিই শূন্য। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী আসেন, যেখানে মাত্র তিনজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। যদিও সেখানে কমপক্ষে ১২ জন চিকিৎসক দরকার। হাসপাতালের ইন্ডোরে প্রতিদিন গড়ে ৮০০-৯০০ রোগী ভর্তি থাকেন, যা শয্যাসংখ্যার প্রায় তিনগুণ।

সিসিইউ বন্ধ ও আইসিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম এবং নানা সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারের সচেতন লোকজন। এই সমস্যা উত্তরণ নিয়ে তারা তোড়জোড় শুরু করেছেন।

পড়ুন: কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর গ্রেপ্তার

দেখুন: ব্যাপক ছাড়ের কথা শুনে কক্সবাজারে গিয়ে বাড়তি খরচ

এস

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন