সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল কবি ও কথাসাহিত্যিক নাজমুল হোসেন মিলন একজন নিভৃতচারী লেখক। চিরায়ত ধারায় বাংলাসাহিত্যে তিনি নিজেকে তৈরি করছেন অমরত্বের স্বপ্ন মেখে। তথ্যপ্রযুক্তিগত এই আধুনিক যুগে সাহিত্যাঙ্গনে মানানসই করে নিজেকে আঁকড়ে ধরে রাখা অত্যন্ত জোরালো ভূমিকার শামিল। সে হিসেবে সাহিত্যচর্চার গ্রহণযোগ্যতায় তিনি অনেকটা দূর এগিয়ে রয়েছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় সমাজ তথা দেশপ্রেমকে ধারণ করে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে সমাজের অনিয়মগুলো পরিবর্তনের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তথাকথিত সমাজের অসংগতিগুলো উপস্থাপনের দায়বদ্ধতা থেকেই সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ভাষায় ফুটিয়ে তুলছেন তার প্রথম উপন্যাস ‘বৃত্ত’।
‘বৃত্ত’ উপন্যাসে প্রচলিত রোমান্টিকতাকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ ভিন্ন রসাত্মক প্রেমের গল্পে রচিত হলেও এর মাধ্যমে আমাদের বর্তমান সমাজে নানাবিধ অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি, ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বসবাসযোগ্য সমাজ, দেশ তথা বিশ্ব গঠনে তরুণ-তরুণীদের নিকট এক অতুলনীয় উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
আমাদের সবার কাছে প্রেম-ভালোবাসার সংজ্ঞা যেমনভাবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে কিন্তু লেখকের কাছে ঠিক তার উল্টো। তিনি মনে করেন, ‘ভালোবাসা হলো সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রিত বহিঃপ্রকাশ। প্রেম বা ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয়। যার কোনো অস্তিত্ব নেই, শুধু অনুভব করা যায়। এটি পদার্থহীন বায়বীয় অবস্থার টেলিপেথি কানেক্টেড বিষয়। যা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। এর আয়ুষ্কাল ক্ষণস্থায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেম, বিদ্রোহ, আবেগ, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মিশ্রিত লেখা এই উপন্যাসটি পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়ে কলুষিত সমাজ পরিবর্তন হলেই তার লেখা সার্থক হবে বলে মনে করি।’
জীবন চক্র একটি বৃত্তের আবর্তে ঘুরপাক খায়। জীবনের যেখান থেকে শুরু তার শেষও বৃত্তের সেই কেন্দ্রবিন্দুতে। মাঝখানের সময়টুকুর মাঝে নানান ঘটনাপ্রবাহ কখনও আমাদের আনন্দে উদ্বেলিত করে আবার কখনও বা বিষিয়ে তুলে জীবনের প্রতি, সমাজের প্রতি, সমাজের নিয়মকানুনের প্রতি, চারদিকে ছড়িয়ে থাকা নানা মতের মানুষের প্রতি। তবুও জীবন থেমে থাকে না। সময়ের সাথে সাথে জীবন চলে যায় অনবরত। আর সেই জীবনে কখনও প্রেম আসে আবার চলে যায়, আবার হয়তো ফিরে আসে ভিন্ন রূপে।
এমন বিচিত্রময় এক জীবন নিয়েই লেখা এই বইটি, যার প্রত্যেক পরতে পরতে রয়েছে সমাজের নানান ঘটনা। এতে রয়েছে হাসির কথা, রয়েছে অব্যক্ত গভীর প্রেমের কথা। যেটা পড়লে পাঠক হৃদয়ে যেমন আনন্দের হাওয়া বইবে ঠিক তেমনি জাগবে কৌতূহল।
এনএ/