‘বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকবো’ গত ২৮ মার্চ কলাপাড়া উপজেলার অডিটোরিয়ামে উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় এমন কঠোর ঘোষণা দিয়েও অবশেষে দল ত্যাগ করেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। উপজেলা বিএনপির সাবেক এ সভাপতি, দুই বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক এমপি শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নের ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিমের নিজ বাড়ির আল কারীম জামে মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে তার হাতে হাত রেখে যোগ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কলাপাড়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট জেড এম কাওসার। তার দল ত্যাগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা। অপরদিকে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সাধারন মানুষ। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার পক্ষে বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন অনেকে।
অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৮১ সালে ভংগুর প্রায় বিএনপিকে সক্রিয় করতে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। এরপর তরুনদের নিয়ে কলাপাড়া বিএনপিকে উজ্জীবিত করেন এবং শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করেন। ১৯৮৮ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামীলীগের দুই শক্ত অবস্থানের প্রার্থীকে পরাচিত করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে অংশগ্রহন করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিট না পেয়ে ঘড়ি প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে পরাজিত হন। এসময় বিএনপির হাই কমান্ড তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন আমলের নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি ফের দলে ফিরে আসেন। কিন্তু দলে তার পূর্বের অবস্থান আর ফিরে পাননি। এরপর ২০০৮ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে আওয়ামীলীগের প্রবল প্রতিরোধের মুখে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে দীর্ঘদিন তিনি বিএনপিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সর্বশেষ ২০২৪ সাল থেকে উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির ২ নং সদস্যের দায়িত্বে ছিলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কলাপাড়া উপজেলার শাখার সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট জেড এম কাওসার বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য ফরম পূরন করে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ ফজলুল করিমের হাতে হাত রেখে তিনি যোগদান করেছেন। ইসলামের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে এবং ইসলামের পক্ষে কাজ করার লক্ষ্যে তার এ সিদ্ধান্ত।
কলাপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি গাজী মো. ফারুক বলেন, তার বরাবরই স্বার্থের প্রতি দুর্বলতা ছিলো। শুরু থেকেই তার কথা ছিলো দলে পোষ্ট পজিশন পেলে সে থাকবে আর না পেলে সে চলে যাবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর সে বলেছিলো আমি সবার ভোটে নির্বাচিত হয়েছি, দল আমার কাছে কিছুনা। সব সময় স্বার্থই তার বড় ছিলো। সর্বশেষ মার্চের বর্ধিত সভায় তিনি বলেছেন বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তারপরও তিনি নিজ স্বার্থের জন্য দল ত্যাগ করেছেন। আমি মনে করি দল থেকে তার চলে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কোন প্রভাব পরবেনা।
অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি বিএনপিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন সঠিক রাজনীতি করছে। জীবনের শেষ বয়সে মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারি এজন্যই আমি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। তবে প্রার্থী হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের কাছে আমি নমিনেশন চাইবো। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে ১১৪ পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে নির্বাচন করবো।
