32 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, জুন ১, ২০২৩

বাড়ছে ব্যয়ের চাপ, সামাল দিতে নাভিশ্বাস

বিশেষ সংবাদ

Tuhin Khalifa
Tuhin Khalifahttps://nagorik.com
Tuhin Khalifa is the News Editor of Nagorik Television.
- Advertisement -

নানা সমস্যায় জর্জড়িত রাজ্য। প্রজারা দুশ্চিন্তায়। সবাই ভাবছে কী হয় কী হয়। উজির মশাই রাজা মশাইকে জানালেন প্রজাদের উদ্বেগের কথা। রাজা মশাই আশ্বস্ত করে বললেন, ওদের বলে দাও শিগগিরই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। উজির প্রজাদের জানিয়ে দিলেন। প্রজারা সবাই আশ্বস্ত হয়ে রাজা-উজিরের তারিফ করতে থাকলো। এবার উজির রাজাকে জিজ্ঞেস করলেন, রাজা মশাই শিগগিরই কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন? রাজা বললেন, চিন্তা করো না। কয়েকদিন গেলেই সব সয়ে যাবে। তখন প্রজারা আর এতো অস্থির হবে না।

গল্পের মতো পরিস্থিতি আমাদের দেশে নয়। তবে বাস্তবতা খুব স্বস্তিরও নয়। ঘরে-বাইরে, অফিসে-বাজারে সব জায়গাতেই দুশ্চিন্তায় মানুষ। আর দুশ্চিন্তায় থাকবে না-ই বা কেন? কোথাও কি স্বস্তি আছে? বাজারে একপ্রকার হাহাকার চলছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। শাক, সবজি, চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনি, বিস্কুট থেকে শুরু করে সাবান, ডিটারজেন্ট, টয়লেট ক্লিনার। কোন জিনিসের দাম বাড়েনি? শুধু কি বেড়েছে? দফায় দফায়। এর যেন শেষ নেই।

এতো গেলো জিনিসপাতির দাম। মানুষের আয় কি বেড়েছে? আয় বাড়ার কোনো লক্ষণই নেই। বেসরকারি সেক্টরে অনেক ক্ষেত্রে উল্টো কর্ম হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে কর্মহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে অনেকের মধ্যেই বিরাজ করছে উদ্বেগ।

পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার যে চেষ্টা করছে না, তা নয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কেম্পানিগুলো ইচ্ছামতো নিত্যদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। এখানে যেন কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। উপায় না পেয়ে মানুষ খরচ কমিয়ে দিয়েছে। যেখানে মাছ-মাংস কিনতো, সেখানে এখন শাক-সবজি দিয়ে চালিয়ে নিতে হচ্ছে।

এই অবস্থার কবে উন্নতি ঘটবে সে নিয়ে পরিষ্কার কোন দিকনির্দেশনাও নেই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্ভিক্ষ আসছে বলে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে বলা হচ্ছে। অনেকটা সতর্ক করেই যেন দায় সারা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ সাশ্রয়ী হবে কি করে? আগে যেখানে সংসার খরচ চালিয়ে মানুষ দুপয়সা সঞ্চয় করতে পারতো, সেখানে এখন নিত্যদিনের খরচ চালানোই কঠিন।

এবার আগের গল্পে ফিরি। সরকারের কেউ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন, কেউ বলছেন যে খাদ্য মজুত আছে তাতে চিন্তার কিছু নেই। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ নিয়েও অস্থিরতা চলছে। দ্রব্যমূল্য সংকট তো কাটছেই না, উল্টো পরিস্থিতি দিন দিন খারাপই হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের পরিষ্কার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। মানুষ যে কষ্টে আছে তাতে সন্দেহ নেই। তাহলে বাস্তবতা কি এমন যে ধীরে ধীরে সব সয়ে যাবে? নাকি সমস্যার সমাধান করা হবে?

আগে যেখানে সংসার খরচ চালিয়ে মানুষ দুপয়সা সঞ্চয় করতে পারতো, সেখানে এখন নিত্যদিনের খরচ চালানোই কঠিন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। শুধু মুখে অনাবাদি জমি ফেলে রাখা যাবে না, বললে হবে না। অনাবাদি জমি চাষ করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে হবে, যাতে কোন জমি অনাবাদি পড়ে না থাকে। যেখানে যে ফসল ভালো জন্মে, সেখানে সেই ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। এতে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। অন্তত খাদ্যশস্যের মজুত ভালো থাকলে মানুষ না খেয়ে থাকবে না।

রাষ্ট্রের এমন পরিস্থিতিতেও প্রতিদিনই খারাপ খবর মিলছে। ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম। কঠোর হস্তে ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাঘব বোয়ালদের কেউ কেউ বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দৃশ্যমান ব্যবস্থা ছাড়া এই খাতে গ্রাহকদের স্বস্তি ফিরবে বলে মনে হয় না।

এই মুহূর্তে গরীব মানুষের কষ্ট দূর করতে টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির আওতা বাড়াতে হবে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে এখন শুধু নিম্নআয়ের মানুষই নয়, মধ্যবিত্তরাও ভিড় জমাচ্ছে। তাই এসব মানুষ যাতে চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনি, পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্য স্বল্পমূল্যে কিনতে পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় স্বল্পমূল্যে বা ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে সাধারণ মানুষের মাঝে হয়তো স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।

লেখক: তুহিন খলিফা
বার্তা সম্পাদক, নাগরিক টেলিভিশন

- Advertisement -

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বাধিক পঠিত