
নদী আমার ভীষণ প্রিয়। নদীর নিরবধি বয়ে চলা জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়। মনে আছে, বহুকাল আগে আমার দাদাবাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় বেড়াতে গিয়ে প্রতিদিন বিকালে নদীর তীরে বসে থাকতাম। নদীটির নাম পোনা নদী। স্রোত একেবারে কম ছিল না। অপলক দেখতাম কচুরিপানা কিভাবে ভেসে ভেসে দূরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
বালু নদী। গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় বহমান নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ ৭৯ মিটার। এটি বেলাই বিল ও ঢাকার উত্তর-পূর্ব বিস্তীর্ণ জলাভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডেমরার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে পড়েছে। শহুরে জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে ছুটির দিনে অনেকেই বেড়াতে যান এই নদীর তীরে।
শরতের শেষাশেষি। নদীর কূলে কূলে যেন কাশফুলের মেলা বসেছে। কাছ থেকে নয়, কাশফুল দূর থেকে দেখতেই ভালো লাগে। হঠাৎ কোথা থেকে শঙ্খচিল এসে ছোঁ মেরে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কচুরিপানার ওপর ঠায় দাঁড়িয়ে বক। অপেক্ষা ছোট মাছের। মাঝে মাঝে কারা যেন ট্রলারে গান বাজিয়ে নেচে গেয়ে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে। শব্দে যেন হঠাৎ ধ্যান ভাঙে বকের। উড়ে গিয়ে বসে অন্য ঢিবির ওপর। এ যেন রূপের ডালি সাজিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি।
সন্ধ্যার আগে আগে কী অপরূপ মায়াময় মুহূর্ত। ট্রলারে শুয়ে যখন আকাশ পানে তাকিয়েছিলাম, সৃষ্টিকর্তার বিশাল সৃষ্টি দেখে প্রাণটা যেন ভরে উঠেছিল। সন্ধ্যা নামতেই পাখিদের নীড়ে ফেরার তাড়া। দূর আকাশে দল বেঁধে ফিরছে পরিযায়ী পাখি। সবমিলিয়ে প্রকৃতি যেন এখানে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।
এবার আসল কথা বলি। নদীর এমন সৌন্দর্যের ছন্দপতন হয়েছে বারংবার। একটু পরপরই ডানে বামে তাকালে দেখা যায় বালু দিয়েই প্রাণ কেড়ে নেয়া হচ্ছে বালু নদীর। বিস্তীর্ণ এলাকা ভরাট করা হচ্ছে। কোথাও দেয়াল তুলে ভরে ফেলা হচ্ছে নদীর জায়গা। দেখার যেন কেউ নেই। নদী বাঁচানোর যেন কেউ নেই। একটা সময় হয়তো বোঝাই যাবে না দখল করা জায়গাটির মালিকানা নদীর ছিল।
এভাবেই লোভী মানুষের লকলকে জিহ্বা গিলে খাচ্ছে নদী। গিলে খাচ্ছে অপার সৌন্দর্য। তাই নদী রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হবে আবহমান বাংলাকে।
লেখক: তুহিন খলিফা, বার্তা সম্পাদক, নাগরিক টেলিভিশন
