
আব্দুল্লাহ শাফী:
মুর্হুমুহু গুলি ও গোলার আতংকে স্থানীয় বাসিন্দারা। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন অনেকেই। মিয়ানমার রাষ্ট্রদুতকে চারবার তলব করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। গ্রহণযোগ্য নয়, মিয়ানমারের ব্যাখ্যাও। ক্রমাগত জটিল হচ্ছে সীমান্ত পরিস্থিতি। উত্তেজনা প্রশমনে কী করা উচিৎ? এই নিয়ে নাগরিকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক আ ন ম মুনীরুজ্জামান। তার মতে, বাংলাদেশের যে শক্তি আছে, কিন্তু প্রয়োগ করছে না। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছে এই বার্তাটা দ্রুত এই পৌছে দিতে হবে।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলোর সঙ্গে দেশটির জান্তা সরকারের বৈরিতা বহুদিনের। বিশ সালে যুদ্ধ বিরতি হলেও ২১ সালের শুরুতে সামরিক জান্তারা ক্ষমতা দখলের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি অধিকারের লড়াই করছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে গণতন্ত্রকামী সাধারণ বার্মিজরাও।
সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি অনেকগুলো সেনা চৌকি দখল করেছে। থাইল্যান্ড ভিত্তিক মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতী নিউজ জানাচ্ছে, প্রচন্ড যুদ্ধ হচ্চে। কুলিয়ে উঠতে না পেরে জান্তার বিমান বাহিনী ব্যবহার করছে। কিন্তু তাদের ব্যবহৃত সমরাস্ত্র সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছে। ভীতি তৈরি হচ্ছে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে।

ক্ষেতে খামারে কাজ করতে যেতে পারছে না কৃষকরা। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। এর মাঝে উখিয়া সীমান্তেও ঝূকি তৈরি হচ্ছে। মিয়ানমার রাষ্ট্রদিুতকে বেশ কয়েকবার তলব করেও কোন লাভ হয়নি। বাংলাদেশ বিষয়গুলোকে উস্কানি হিসেবেই দেখছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপে কী কোন সমাধান আসবে?
সম্ভাব্য যেসব পথে সমাধান:
- সামর্থ্য আছে তার জানান দিতে হবে
- নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য করতে হবে
- যেতে হবে ভারত, চীন মিয়ানমারের কাছে
নিরাপত্তা বিষয়ক থিংক ট্যাংক বাংলাদেশ ইনিস্টিটি অব পিস এন্ড সিকিউরিট স্টাডিজ দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার নিয়ে কাজ করছে। ইনষ্টিটিউটের সভাপতি নিরাপত্তা বিশ্লেষক আ ন ম মুনীরুজ্জামান মনে করেন। শক্ত একটা বার্তা দিতে হবে, যাতে বোঝানো হবে, শক্তি আছে তবে প্রয়োগ করছিনা।
তিনি বলেন, “ প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের যে ডেটারেন্স ক্যাপাবিলিটি আছে সেটাকে তাদের কাছে প্রদর্শন করতে হবে বা তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। অথ্যাৎ আমাদের যে সামরিক সক্ষমতা আছে তার প্রকাশ তাদের কাছে থাকতে হবে। তারা যাতে বুঝতে পারে যে এই ধরনের সক্ষমতা ব্যবহার করার জন্য আমরা প্রস্তুত। এইটা একটা সামরিক পর্যায়ে হয়।”
এর জন্য যে বাংলাদেশর রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে বসতে সেটিও মনিয়ে করিয়ে দেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। মুনীরুজ্জামান বলেন, “পাকিস্তান যখন ভারতের পুলওয়ামায় হামলা করেছিলো তখন বিজেপীর মোদি সরকার, বিরোধীদল কংগ্রেসসহ সব রাজনৈতিক দলগুলো এক টেবিলে ডেকেছিলো। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে একমত হয়ে পাকিস্তানের কাছে বার্তা পাঠিয়ে ছিলো। এবং এরপর কিন্তু আর কোন ধরনের ঘটনা বা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবসময়ই বলে আসছে তারা সব পর্যায়ের যোগাযোগ করছে। দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমেও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এসব তৎপরতা কতটা কাজে দিবে তা নিয়ে সন্দিহান এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তার মতে, যেতে ভারত, চীন ও রাশিয়ার কাছে।
তিনি বলেন, তিনটি দেশের কথা বলতে হয়, মিয়ানমারকে সমর্থন করে ভারত, চীন ও রাশিয়া তো এই তিন দেশের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের কাছে পরিষ্কার বার্তা পৌছে দিতে হবে যে এই ধরনের কাজ কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং অনতিবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের সম্ভাব্য পথ এসব। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির জটিল সমীকরণ আর দেশের অভ্যন্তরীন মতবিরোধ। সব মিলিয়ে সংকট সমাধানে সরকার কতোটা উদ্যোগী হতে পারবে সেখানেও মোটা দাগের প্রশ্নবোধক চিহ্ন টানেন এই বিশ্লেষক।
আব্দুল্লাহ শাফী/ফই
