কানাডার ৪৫তম ফেডারেল নির্বাচন আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজ রোববার (২৪ মার্চ) দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ‘হাউজ অব কমন্স’ সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের জন্য গভর্নর জেনারেলকে অনুরোধ জানান। তার অনুরোধ গ্রহণ করে গভর্নর জেনারেল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। নির্বাচনের আগে প্রচারণার জন্য কমপক্ষে ৩৬ দিন সময় দেওয়ার বিধান রয়েছে, যা আগামী ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত সময় নির্ধারণ করেছে।

কানাডার পার্লামেন্টে মোট ৩৪৩টি আসন রয়েছে,
এবং যেকোনো দল সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৭২টি আসন। বর্তমানে কানাডার প্রয়োজন শক্তিশালী অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি স্থিতিশীল অবস্থান, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মার্ক কার্নি, যিনি মধ্যপন্থি লিবারেল পার্টির নেতা, ২০১৫ সালের নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার পতনের পর দলের নেতৃত্বে আসেন। কার্নি অর্থনীতির সাবেক প্রধান হিসেবে মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবিলায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আরও শক্তিশালী ম্যান্ডেটের মাধ্যমে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছেন।
কার্নির নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি প্রথম দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টিকে সামনে এনে বক্তব্য রেখেছে। লিবারেল পার্টি বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য জনগণের সমর্থন চাচ্ছে। কার্নি নিজেও বলেছেন, “আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতি তৈরি করতে চাই, যা আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখবে এবং ট্রাম্পের অযাচিত বাণিজ্য উদ্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।”
বর্তমান পরিস্থিতি জন্য একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা নিয়ে একাধিক বিবৃতি দিয়েছেন। ট্রাম্প কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিণত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিষয়টি দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং লিবারেল পার্টির পক্ষ থেকে মার্কিন আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট চাওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কার্নির নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি দেশের জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, যা তার দলকে নির্বাচনে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তবে, কানাডার অর্থনীতি এখনো বাণিজ্য শুল্ক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চাপের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে।
এই নির্বাচনে কার্নির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবে পিয়েরে পয়লিয়েভের কনজারভেটিভ পার্টি, জাগমিত সিংয়ের এনডিপি পার্টি, ব্লক কুইবেক পার্টি এবং গ্রিন পার্টি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কানাডার বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মার্ক কার্নি তার দলকে পুনরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সফল হবেন।
কার্নি নিজের ভাষণে বলেছেন, “আমরা কানাডাকে নিরাপদ রাখার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ নেব এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যে কোনো অযাচিত বাণিজ্য পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়ে থাকব।” তিনি আরও জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তেমন কোনো সাক্ষাৎ করবেন না যতক্ষণ না কানাডার সার্বভৌমত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া না হয়।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে কানাডার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে। কার্নি এবং তার দল লিবারেল পার্টি তাদের শক্তিশালী অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা প্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনী লড়াইয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
পড়ুন: হঠাৎ কেন কানাডায় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা
দেখুন: কানাডায় কারা আবেদন করতে পারবেন
ইম/