১৩/০৬/২০২৫, ১২:১৫ অপরাহ্ণ
35 C
Dhaka
১৩/০৬/২০২৫, ১২:১৫ অপরাহ্ণ

একই কারখানা, একই কাজ—তবু পুরুষের বেতন ২০ হাজার, নারীর মাত্র আড়াই হাজার!

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা এলাকা এখন দেশের চুল ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। মেয়েদের মাথার পরিত্যক্ত চুল প্রসেসিং করে ব্যবসায়ীরা বিদেশে রপ্তানি করছেন। এতে চুল থেকে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক টাকা আয় করছেন তারা। উপজেলার প্রত্যন্ত এই গ্রামগুলোতে প্রতিদিন ভোর শুরু হয় শত শত নারী শ্রমিকের ঘুমচেরা কর্মদিবস দিয়ে। কোনো বড় শিল্পাঞ্চলে নয়—নিজ গ্রামে, নিজের ঘরের এক কোণে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরেই চলে চুল প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। এখানেই তৈরি হয় একের পর এক রফতানিযোগ্য চুলের বান্ডিল, যার গন্তব্য বহু দূরের চীন।

এই ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তা মো. শাহজামাল (৪০)। একসময় তিনি ছিলেন দিনমজুর; ফলের ব্যবসা দিয়ে শুরু হয়েছিল তার পথচলা। পরে অন্যদের দেখে শুরু করেন চুল ব্যবসা। সময়ের ব্যবধানে গড়ে তোলেন ১৫টি চুল কারখানা, যেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন প্রায় ২০০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ।

পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করেন ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নারীরা কাজ করেন ভোর ৫টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত—প্রায় ৬ ঘণ্টা। কাজের ধরনে বিশেষ পার্থক্য নেই—সবই হাতে করা। নারীরা চুল ছাড়ান, জট খোলেন, গুছিয়ে রাখেন। পরে পুরুষরা সেই চুল ছেঁটে, ধুয়ে বান্ডিল তৈরি করেন।

তবু থেকে যায় বৈষম্য বেতনে।

পুরুষ শ্রমিকরা মাসে পান ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ২,৫০০ টাকা। অথচ সময়ের হিসেবে এবং কাজের তুলনায় নারীদের বেতন হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা—মনে করেন শ্রম বিশ্লেষকেরা।

এক নারী শ্রমিক রহিমা খাতুন বলেন, “সকালে উঠে চুল ছাড়াতে বসি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করি হাতে। ছেলেরা তো পরে কাজটা করে, তার আগে আমরাই সব করি। এই আড়াই হাজার টাকায় সংসার চালানো খুব কষ্ট… তবুও চালিয়ে নিচ্ছি আল্লাহ ভরসা।”

অপর নারী শ্রমিক শেফালী খাতুন বলেন, “পুরুষরা বেশি টাকা পায়, আমরা কম—এটা তো আগে থেকেই। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম বাড়ছে, এই টাকায় চলা যায় না। আমরা চাই আমাদের মজুরি যেন একটু বাড়ানো হয়।”

এ বিষয়ে মালিক মো. শাহজামালের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ছেলেরা দিনভর কাজ করে, আর মেয়েরা অল্প সময় কাজ করে। তবে মেয়েদের কাজের ধরন সহজ না, এটা আমি জানি। ভবিষ্যতে তাদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছি।”

আজ মো. শাহজামালের মালিকানায় রয়েছে বিলাসবহুল দুটি দোতলা বাড়ি এবং প্রায় ১৪-১৫ বিঘা জমি। একসময় যিনি ছিলেন দিনমজুর, আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার হাতে তৈরি হয়েছে ২৫০ মানুষের কর্মসংস্থান।

কার্পাসডাঙ্গা চুল প্রসেসিং ব্যাসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের এলাকার সকল চুল ব্যাবসায়ীরা বেশ সাচ্ছন্দে কোন ঝামেলা ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছে। আমরা নারীদের বেতনের বিষয়ে ভাবছি। তাদের বেতন বাড়ানো হবে।

তবে এই সাফল্যের গল্পের মাঝেই রয়ে গেছে একটি কঠিন প্রশ্ন—

আজ ১ মে—আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। সারাবিশ্বে যেখানে ‘সমান কাজে সমান মজুরি’র দাবি উঠছে, সেখানে দামুড়হুদার নারী শ্রমিকরা এখনও টিকে আছেন মাত্র আড়াই হাজার টাকায়।

শ্রম সমান, পরিশ্রম সমান—তবু কি শুধুমাত্র নারী বলেই কম পারিশ্রমিক?

এই প্রশ্নই আজ শ্রমিক দিবসের প্রতিটি স্লোগানের পেছনে গর্জে উঠছে দামুড়হুদার চুল কারখানায়।

উল্লেখ্য, রেমি (প্রসেসিং) চুলের দৈঘ্যের ওপরই এর মূল্য নির্ভর করে। চুল যত লম্বা হবে বাজার দরও তত বেশি হবে। চুলের এই দৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে এর বাজার মূল্য সর্বনিন্ম ৬ ইঞ্চি চুল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২২-৩২ ইঞ্চি সাইজের চুল প্রতিকেজি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ২২ ইঞ্চি থেকে ৩২ মাপের লম্বা চুলকে সর্বোচ্চ গ্রেডের চুল বলা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ চীনে এই চুল বিক্রি করা হয়।

পড়ুন: সরকারের ভুল নীতিতে আ. লীগ সমর্থকের কারখানা বন্ধ করে শ্রমিক ছাঁটাই ঠিক হয়নি : রিজভী

দেখুন: ভৈরবে হাতে তৈরি জুতার কাছে হার মানছে চায়নার কারখানাও! |

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন