১৫/০৬/২০২৫, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ
27.9 C
Dhaka
১৫/০৬/২০২৫, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীর ভিড়

ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় কুমিল্লার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেও শালবন বৌদ্ধ বিহারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন স্পট গুলোতে ঘুরতে আসছে মানুষ। কুমিল্লা জেলার অধিবাসীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১৪শ’ বছর পুরানো বৌদ্ধ বিহার এবং শতবর্ষী শালবনের সবুজ অরণ্য ঘুরে দেখছেন তারা। এছাড়া নব শালবন বিহারেও দেখছেন অনেকে।শালবন বিহার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী প্রত্নক্ষেত্র ইটাখোলা মূড়া, রূপবান মূড়া, হাতিগাড়া মূড়াসহ বিভিন্ন স্পটগুলোতে ঘুরছে সাধারণ মানুষ। আবার অনেকে ছুটছেন কুমিল্লার গোমতি নদীকে কেন্দ্র করে গড়া উঠা বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে। তবে প্রচন্ড গরমে শিশু ও নারীদের ভোগান্তিতে হচ্ছে বলে জানালেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া প্রচন্ড গরমে অনেকেই বিহার ছেড়ে আশেপাশের গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।


ঢাকা থেকে আসা একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমার দুই মেয়েকে নিয়ে এই প্রথম কোটবাড়ী শালবন বৌদ্ধ বিহার দেখতে আসলাম৷ এখানে এসে ঘুরে যেমন ভালো লেগেছে তেমন আমার ছোট দুই মেয়ে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানতে পেরেছে। তার মেয়ে স্কুল পড়ুয়া ইফতি আহমেদ জানান, শালবনে ঘোড়ায় চড়ে ভালো লেগেছে। বনটা একদম ছোট। বিহারে গিয়ে দ্রুত ঘুরে বের হতে হয়েছে, অনেক গরম।


কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে বার্ডেরকাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।ধারণা করা হয় যে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়।


নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মাধুরী দেবনাথ বলেন, ঈদের ছুটিতে কুমিল্লায় এসেছি, দুইদিন ঘুরবো। শালবন বিহারের ভালো লেগেছে। ছেলে মেয়েরা শুধু বইয়ের পড়েছে এই বিহার সম্পর্কে, এবার তারা সামনাসামনি প্রাগৈতিহাসিক বিশাল বৌদ্ধ মন্দিরটি দেখলো।


তবে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, শালবন বিহারের আশেপাশে আরো যেসব বৌদ্ধ মন্দির বা বিহার রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে একটি প্রকাশ্য সাইনবোর্ড বা রোডম্যাপ থাকলে খুব ভালো হত। আগে থেকে জানা না থাকলে- অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে শুধু শালবন বিহার ঘুরে চলে যায়, আশেপাশে যে ইটাখোলা মূড়া, রূপবান মূড়া রয়েছে, তা বুঝতে পারে না।
তার মেয়ে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নীলাঞ্জনা দেবনাথ বলেন, শালবনে এসে দেখলাম বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিভাবে পড়াশুনা করতেন। পূজাপাঠ করতেন। বইয়ে পড়া জিনিস বাস্তবে দেখে ভালো লাগছে।


কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা থেকে আসা ফরিদুজ্জামান বলেন, বিহারের ভেতরে অনেক গরম। বাচ্চাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে সবাই তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছে। ভেতরে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। ছায়া বসতে হলেও দূরে যেতে হবে। তারপরও ঘুরতে আসা কারণ ঈদের পরে আর ছুটি পাওয়া যাবে না।


কুমিল্লা গোমতি টাচ এর চেয়ারম্যান মীর মফিজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে গাছগাছালির না থাকায় দর্শনার্থীরা ঘুরতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন, আর আমাদের গোমতি টাচ নদীকে কেন্দ্র করে গাছগাছালির সমন্বয়ে সুনিবিড় ছায়ায় গড়ে তোলা হয়। তাই প্রচন্ড গরমেও মানুষ এখানে আসছে প্রশান্তির জন্য। ফলে আমাদের এখানে দর্শনার্থীরা বেশি আসে।


শালবন বিহারের দায়িত্বে থাকা ময়নামতি যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মোঃ শাহীন আলম বলেন, ঈদের পর দিন দর্শনার্থী কম থাকে। আর এবার অনেক গরম। তবে আশা করছি, আগামী যে কয়দিন ছুটি আছে, অনেকেই আসবেন।


এদিকে পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে প্রত্নক্ষেত্র গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুমিল্লার পরিদর্শক হারুনুর রশিদ জানান, শালবন বিহার এলাকায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও থানা পুলিশও কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি সরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে পুলিশের হট লাইন নাম্বার দেয়া আছে, কারো কোন অভিযোগ থাকলে তারা সেটিতে কল করে জানাতে পারেন।

পড়ুন: আইসক্রিম বিক্রির টাকা দিয়ে সিনেমা দেখতে যেতাম: জায়েদ খান

দেখুন: মেহেরপুরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই |

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন