প্রায় আড়াই বছর ধরে মরণব্যাধি ক্যান্সারে সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন টিভি উপস্থাপক ও অভিনেত্রী সামিয়া আফরিন। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তার ক্যানসার ধরা পড়েছিল, যা ছিল স্টেজ ৪ এ। ক্যানসারের এই কঠিন সময়ে তার পাশে ছিলেন তার পরিবার এবং সহকর্মীরা। তবে, সামিয়া আফরিন নিজের মনোবল এবং দৃঢ়চিত্ততার মাধ্যমে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্যানসারের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম একটি সাহসিকতার গল্প, যা এখন অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।
সম্প্রতি, রাজধানীর বনানীতে তারকাদের পোশাক নিয়ে আয়োজিত এক প্রদর্শনী “রিভোগ ওয়্যার টু কেয়ার”-এ অংশগ্রহণ করেন সামিয়া আফরিন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রাপ্ত পোশাক বিক্রির টাকা ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় করা হবে। উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি ২২ মার্চ শেষ হয়, যেখানে সামিয়া আফরিনসহ আরও অনেক তারকা অংশগ্রহণ করেছিলেন। সামিয়া আফরিন নিজেও এই প্রদর্শনীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।

এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যান্সারে রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা।
সামিয়া আফরিন বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে, ক্যানসারের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল এবং সব মানুষের জন্য এটি বহন করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থায়, যদি আমাদের কিছু সামর্থ্য থাকে এবং আমরা আমাদের কিছু পরিধেয় পোশাক বিক্রি করি, তবে সে টাকা ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা করবে।” সামিয়া আরও বলেন, “আমরা সবাই কিছু না কিছু করতে চাই, কিন্তু সুযোগ পাওয়া সবসময় সহজ নয়। আমি মনে করি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা সবাই একত্রে ছোট ছোট সাহায্য করে বড় একটি কাজ করতে পারব।”
সামিয়া আফরিন তার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধের সময়কার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “ক্যানসার যখন ধরা পড়ে, তখন আমরা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। মনে হয়, জীবন শেষ হয়ে গেছে। তবে, আমি জানি যে, এটি ভুল চিন্তা। যদি আমরা চেষ্টা করি এবং মানসিকভাবে দৃঢ় থাকি, তাহলে এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আনতে হয় এবং সঠিক মনোবল নিয়ে লড়াই করতে হয়।” তিনি আরও বলেন, “প্রায় আড়াই বছর ধরে আমি এই রোগের সঙ্গে লড়াই করছি। তবে আলহামদুলিল্লাহ, এখন ভালো আছি।”
তিনি আরো বলেন, “ক্যানসার আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, রোগী যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে। অনেক সময় রোগীরা মনে করে, জীবন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এটা আসলে ভুল। যদি আমরা আশাবাদী থাকি এবং মনোবল হারাতে না চাই, তাহলে এ রোগ থেকে সেরে উঠা সম্ভব।”
এছাড়া, সামিয়া আফরিন টিভি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে একসময় জনপ্রিয় মুখ ছিলেন। বিভিন্ন নাটকেও তাকে দেখা গেছে। “পাপপূণ্য”, “ধুলোর মানুষ”, “মানুষের ঘ্রাণ” এবং “ব্লাফমাস্টার” নামক নাটকগুলোতে তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
এছাড়া, তিনি বলেন, “এমনকি যখন ক্যান্সারে সঙ্গে লড়াই করছিলাম, আমি সবসময় দৃঢ়চেতা থাকতে চেয়েছিলাম। আমি চাইনি কেউ আমাকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখুক, বরং আমি নিজে শক্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।” তার এই মনোবল এবং সাহসিকতা অনেককে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা জুগিয়েছে।
এই প্রদর্শনীর আয়োজনের মাধ্যমে সামিয়া আফরিন যে সাহসিকতা ও মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সমাজের জন্য একটি বড় বার্তা। তাঁর এই উদ্যোগ কেবল ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় সহায়ক হতে সাহায্য করবে না, বরং এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখবে।
পড়ুন: ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর আলোকে বাংলাদেশ ও বিশ্ব
দেখুন: দাঁতের ক্যান্সারে হওয়ার কারণ কী?
ইম/