গাজায় ইসরায়েলের ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ায় তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে গাজাবাসী। জাতিসংঘ গাজার এই পরিস্থিতিকে catastrophic hunger বা বিপর্যয়কর ক্ষুধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যা ক্ষুধার সর্বোচ্চ ধাপ হিসেবে পরিগণিত। জাতিসংঘের হিসাব মতে, গাজায় ২৩ লাখ মানুষ এই বিপর্যয়কর ক্ষুধায় ভুগছে।
গতকাল শুক্রবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
জাতিসংঘের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে খাদ্যসংকটপূর্ণ ও ক্ষুধার্ত এলাকা হলো গাজা উপত্যকা। তারা হুঁশিয়ার করে বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সব লোক এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এর মধ্যেই গাজায় ক্ষুধায় কাতর ত্রাণ পেতে মরিয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গুলিতে গত দু’দিনে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬২ জন।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (OCHA) এর মুখপাত্র জেন্স লারকে শুক্রবার বলেছেন, গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার ১০০ শতাংশই এখন “বিপর্যয়কর ক্ষুধার” দ্বারপ্রান্তে। লার্ক বলেন, “গাজায় সীমিত সংখ্যক ট্রাক বোঝাই আসছে- এটি চাহিদার তুলনায় ফোঁটা-ফোঁটা খাবার। আমরা যে সাহায্য অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত, তা একটি কার্যকরী স্ট্রেইটজ্যাকেটের মধ্যে আটকে দেওয়া হচ্ছে যা এটিকে কেবল আজকের বিশ্বেই নয়, সাম্প্রতিক ইতিহাসেও সবচেয়ে বাধাগ্রস্ত সাহায্য অভিযানগুলির মধ্যে একটি।
জাতিসংঘের এই মানবিক সংস্থা আরো জানায়, গাজার জনগণ এখন অনাহারের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এবং অবিলম্বে সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে।
OCHA এর মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেন, ইসরায়েল এখনও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি অনুমোদিত ৯০০টি সাহায্যবাহী ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৬০০টি গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, আমরা যা নিয়ে যেতে পেরেছি, তা কেবল ময়দা। এটি রান্না না করলে খাওয়ার উপযোগী নয়, অথচ গাজার শতভাগ জনগণ এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, ইসরায়েলের কারণে গাজার মানুষেরা অনাহারে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি মনে করেন, এ কারণেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্লেচার এসব কথা বলেন।
গত দুই সপ্তাহে গাজায় নতুন করে ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেন্স লারকে। সহায়তা প্রবেশে জটিলতা ও নিরাপত্তাজনিত বাধার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চলাকালে গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল। প্রায় তিন মাসের অবরোধের পর গত সপ্তাহে উপত্যকাটিতে সীমিত পরিসরে খাবার, ওষুধ, জ্বালানি এবং আশ্রয় সামগ্রীর মতো ত্রাণগুলো সরবরাহের অনুমতি দেয় তারা। এরই মধ্যে ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় নতুন করে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল বলছে, গাজায় এখনো আটক থাকা ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার জন্যই তারা চাপ প্রয়োগের এ কৌশল নিয়েছে। ধারণা করা হয়, ৫৮ জিম্মির মধ্যে অন্তত ২০ জন এখনো জীবিত। এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, জর্ডানের আম্মানে সংস্থাটির গুদামে গাজার জন্য এক মাসের প্রয়োজনীয় খাদ্য, চিকিৎসা ও মানবিক উপকরণ মজুদ রয়েছে। এসব ত্রাণ একবারে ২ লাখ মানুষের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সীমান্ত খুলে না দিলে তা পৌঁছানো সম্ভব নয়।
এনএ/


