ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধের উত্তেজনা আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এবার সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার হুমকি দিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, তেল আবিবের কাছে হোলন শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই হুমকি দেন। কাৎজ বলেন, “খামেনি তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সবসময় ইসরায়েল ধ্বংসের পরিকল্পনা করে আসছেন। এ ধরনের ব্যক্তি, যিনি আমাদের ধ্বংস করতে চায়, তার আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তাকে থামানোই এখন আমাদের অভিযানের অংশ। এমন একজন মানুষকে আর বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া যায় না।”
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, সকালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মূল লক্ষ্য ছিল সোরোকা হাসপাতালের পাশের একটি সামরিক স্থাপনা, হাসপাতাল নয়।
ইসরায়েল শুরু থেকেই ইরানে ‘শাসন পরিবর্তন’- এর ইঙ্গিত দিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত শুক্রবার ইরানে বিমান হামলা শুরুর পর ইংরেজিতে এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, “এই অভিযান ইরানিদের স্বাধীনতার পথে সহায়ক হবে।”
ইসরায়েলি আক্রমণকে কেন্দ্র করে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। গত মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে তিনি ইঙ্গিত দেন, “আমরা এখনই তাকে সরাচ্ছি না। তবে আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।”
ট্রাম্পের এমন স্পষ্ট মন্তব্যের মাত্র ঘণ্টাখানেক পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেন। এদিকে, দেশজুড়ে চলমান হামলা এবং অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “সরকারের সব বিভাগকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে দেশের পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে। কোনো কিছুর প্রতি বিমুখ হবেন না। আমরা এই কঠিন সময় পেরিয়ে যাবো।”
পেজেশকিয়ান আরও বলেন, “সৃষ্টিকর্তার কৃপায়, সহানুভূতি ও সংহতির মাধ্যমে আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব।”
গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে ইতোমধ্যে দুই দেশ একে অপরকে লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ, বৃহস্পতিবার ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের হোলোন শহরে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র বলছে, আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে পড়েছে ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র। জেরুজালেম, তেল আবিব, রামাত গান, বিরসেভা সবখানেই হয়েছে ক্ষয়ক্ষতি। ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১৩৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম। ইসরায়েলের জরুরি উদ্ধার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আহতদের অধিকাংশই ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের লক্ষ্য এখন আর শুধু সামরিক নয়, মনস্তাত্ত্বিকভাবেও চাপ সৃষ্টি করা। বিশেষত, সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আঘাত হানার মাধ্যমে ইসরায়েলি জনমনে ভীতি ছড়ানোর কৌশল নিয়েছে তেহরান। যদিও ইরানের দাবি সোরোকা হাসপাতাল নয়, তাদের লক্ষ্য ছিলো হাসপাতালটির পাশের একটি সামরিক স্থাপনা।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আগামী শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসবে। ইরান, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়ার অনুরোধে ডাকা হয়েছে এই বৈঠক। বৈঠকে অংশ নেবে ইসরায়েলও।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো, উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের ব্যাপারে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো। বিশ্বনেতারা যদি এই সংঘাতে সঠিকভাবে হস্তক্ষেপ না করেন, তাহলে খুব শিগগিরই এটি আঞ্চলিক যুদ্ধ থেকে বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
এনএ/