১৯/০৬/২০২৫, ০:৩৮ পূর্বাহ্ণ
26.3 C
Dhaka
১৯/০৬/২০২৫, ০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

খুলনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ বাড়ায় জনমনে আতঙ্ক

সম্প্রতি খুলনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে। নদী-খালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক পচাগলা লাশ উদ্ধার হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুলিশ বলছে, অধিকাংশ লাশের আঙুলের টিস্যু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মরদেহগুলো ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে দাফন করা হচ্ছে। কিছু ঘটনায় হত্যার আশঙ্কা করছে, অন্যদিকে কিছু ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা বলেও ধারণা করছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অজানা থাকায় জনমনে আতঙ্ক ও নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকেও ভাবিয়ে তুলেছে।


পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ মে খুলনার ৬ নম্বর মাছঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতনামা এক যুবকের মরদেহ। তার পরনে ছিল নীল গেঞ্জি ও কালো প্যান্ট। যুবকের মুুখ ও হাতের আঙুলের টিস্যু পচে যাওয়ার কারণে সিআইডি এবং পিবিআইয়ের বিশেষজ্ঞ টিম তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। পরে তার শরীর থেকে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। এরপর সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানাধীন মতিয়াখালী খালে একটি ডালে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। ওই নারীর শরীরের ওপর অংশে কোনো কাপড় ছিল না। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। ৯ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়ন সংলগ্ন আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষত চিহ্ন ছিল। তার পরনে ছিল নীল রঙের প্যান্ট এবং শরীরের ওপরের অংশে কোনো কাপড় ছিল না।
সবশেষ বুধবার ১১ জুন সকাল ৮টার দিকে খুলনা সদর থানাধীন মতিয়াখালী সুইচ গেট খালের মাথায় আরেকটি মরদেহ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, মরদেহটি পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় একটি গাছের ডালে আটকে ছিল।


প্রত্যক্ষদর্শী জসিম শেখ বলেন, লাশটি দেখতে ভয়ংকর অবস্থা ছিল। শরীরের একাধিক জায়গায় চামড়া পচে গিয়েছে। নিচের অংশে ছিল কালো কাপড়, ওপরের অংশে কিছুই ছিল না। পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহটিরও পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
খুলনা সদর নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বলেন, শরীরের পচন এবং টিস্যু নষ্ট হওয়ায় পরিচয় বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ডিএনএ ও ভিসেরা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
রূপসা নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর আশপাশের থানাগুলোতে ছবি পাঠানো হয়েছে। এখনো কেউ শনাক্ত করেনি। এটি হত্যাকান্ড বলেই আমাদের সন্দেহ।


খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বেড়েছে। এটা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে যেসব মরদেহের গায়ে আঘাতের চিহ্ন বা শ্বাসরোধের আলামত রয়েছে, সেগুলো আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছি। তবে একের পর এক পরিচয়হীন লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ।


খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সম্প্রতি গুম, খুন, নিখোঁজের ঘটনা বেড়েছে। এটি উদ্বেগজনক। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি মৃত্যুই এখন পুলিশের কাছে রহস্য। তারা হত্যাকান্ডের শকিার কি না, তা নিশ্চিত করতে পারছে না। আবার নিছক পানিতে ডুবে যাওয়া, আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যার শিকার সেটিও স্পষ্ট নয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা বাড়ানো দরকার।


এভাবে পরপর একাধিক লাশ উদ্ধারে খুলনার সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ঘটনার ছবি ও খবর ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠছে। এই মৃত্যুগুলো কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি কোনো সংগঠিত অপরাধচক্রের কাজ।

পড়ুন: নাটোরে মাটি পরিবহনের সময় ৪০টি ট্রাক্টর জব্দ করেছে সেনাবাহিনী

দেখুন: দাফনের ১০ মাস পরও অক্ষত মরদেহ 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন