গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ চলছে । সর্বত্রই ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে সাধারণ ধর্মঘট পালন করা হলেও কিশোরগঞ্জে ভিন্ন নির্দেশের অভিযোগ উঠেছে।
এমন অভিযোগটি উঠেছে কিশোরগঞ্জ শহরের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে। তিনি গতকাল (৬ এপ্রিল) কলেজের সকল শিক্ষককে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে নোটিশ জারি করেছেন। তার এই নোটিশের একটি কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পরেই বিষয়টিকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
মুশফিকুর রহমান জিহান নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে হলেও গতকাল আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষ ফিডব্যাক একটি নোটিশ দেওয়া প্রয়োজন ছিল।
ফারদিন আহমেদ জাকারিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন একজন মাদকাসক্ত, বদমেজাজি এবং সম্পূর্ণ অযোগ্য ব্যক্তি অধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন, তখন এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে? ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কারণে আজ আমি আমার কলেজের পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করছি। একজন মানবতাবিরোধী ব্যক্তি কোনোভাবেই এই কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে থাকার যোগ্য নন। আমরা তাঁকে সবিনয়ে আহ্বান জানাচ্ছি, সসম্মানে পদত্যাগ করে আমাদের এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। অন্যথায়, অতীতের মতোই তাঁকে চরমভাবে অপমানিত করে পদত্যাগে বাধ্য করতে আমরা বাধ্য হব। আমরা জেগে আছি, ঘুমিয়ে পড়িনি।
এই বিষয়ে কথা বলতে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ অধ্যক্ষের (ভারপ্রাপ্ত) সাথে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এই কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ নোটিশ জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য যে, শনিবার (৫ এপ্রিল) প্রথম এই কর্মসূচির আহ্বান করা হয় ‘ট্রান্সলেটিং ফালাস্তিন’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থেকে। একাউন্টটি সাধারণত গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কনটেন্ট পোস্ট করে থাকে। শনিবার তারা একটি ছবি পোস্ট করে যাতে ফিলিস্তিনের পতাকাসহ লেখা থাকে “দ্য ওয়ার্লড স্টপস ফর গাজা। নো ওয়ার্ক। নো স্কুল। আনটিল দ্য জেনোসাইড স্টপস।’
৭ এপ্রিল সাধারণ ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পোস্ট করা হয় ইংরেজি এবং আরবি দুই ভাষাতেই। পৌনে চার লাখ ফলোয়ারের এই ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থেকে দ্রতই ছড়িয়ে যায় এই ধর্মঘটের আহ্বান। সংহতি জানিয়ে সেই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই জানান, তারা নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবেন এবং কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশেও ‘দ্য ওয়ার্লড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে সোমবার তাদের কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ এবং মিছিল করছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।