ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ অবস্থায় ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা আনাদোলু এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। এর ফলে গাজার মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে, যা একটি অত্যন্ত শোকাবহ পরিসংখ্যান।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আহত হওয়া ১৩৭ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘাতের শুরু থেকে গাজায় আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৫ জনে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেক ফিলিস্তিনি এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন, কিন্তু উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি হামলা পুনরায় শুরুর পর থেকে। ওই সময় থেকে প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, এবং হামলা শুরুর পর ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে, দেইর আল-বালাহতে একটি বাড়িতে হামলায় ৯ জন এবং খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালের কাছে একটি তাঁবুতে বোমা হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, এবং নাগরিক অবকাঠামোর ক্ষতি ইতোমধ্যেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের মতে, গাজায় প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলাগুলি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে, কিন্তু ইসরায়েলিরা তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে।
গাজার দীর্ঘমেয়াদী সঙ্কটকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় আক্রমণের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। ১৯ জানুয়ারিযুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, হামাসের সঙ্গে মতবিরোধ এবং থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে মার্চ মাসে ফের ইসরায়েল হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি এই নির্যাতন এবং গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, মানবাধিকার সংস্থা, এবং জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, যদিও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরাহা এখনও হয়নি।
তবে, পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফ থেকে কোনও স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ত্বরিত উদ্যোগের প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন।
পড়ুন : আপাতত ত্রাণ যাবে না : ইসরায়েলের সেনাবাহিনী
দেখুন : আর্জেন্টিনাসহ যেসব দেশেসেবন বৈধ |
ইম/