ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নতুন করে ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৬ সদস্যও রয়েছেন। এর ফলে গাজার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে নিহতের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলায় একই পরিবারের ৬ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়াও, উত্তর-পশ্চিমে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলায় আরও ৪ জন নিহত হয়েছেন।
চিকিৎসকরা আরও জানান, পশ্চিম গাজা শহরের আরেকটি হামলায় সাবেক ফুটবল খেলোয়াড়ও নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম গাজার তাল আল-হাওয়া এলাকায় কাঠ সংগ্রহ করতে থাকা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলায় আরও ২ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।
দক্ষিণ র খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন। একই শহরে পূর্বের ইসরায়েলি হামলায় ৩ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এছাড়া, খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত তাঁবুর ওপর ইসরায়েলি হামলায় ৩ শিশু সহ ৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আরও ১২ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী ইউনিভার্সিটি কলেজের কাছেও গোলাবর্ষণ করেছে, যাতে আরও একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। উপকূলীয় অঞ্চলে হামলা শুরু হলেও আহতদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা ও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবির এবং রাফাহ শহরে গোলাগুলির ঘটনায় উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩,৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এটি জানুয়ারি মাসে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের পরবর্তী ঘটনা।
বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এদিকে, ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি করেছে। ইসরায়েল তার বর্বর হামলা থামানোর কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না, যার ফলে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এই হত্যাযজ্ঞ চলমান থাকলেও,
আন্তর্জাতিক চাপের পরও ইসরায়েল শান্তির পথে আসতে প্রস্তুত নয়। দীর্ঘ ১৫ মাসের সামরিক অভিযান শেষে, ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল ইসরায়েল। তবে, গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় আবার বিমান হামলা শুরু করেছে।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং ফিলিস্তিনিরা এক কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে তাদের জীবন রক্ষা করতে হচ্ছে ইসরায়েলি হামলা ও আন্তর্জাতিক শোষণের শিকার হয়ে।
পড়ুন:হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে নেত্রকোনার কবি-লেখকদের কালো ব্যাজ ধারণ
দেখুন: আর্জেন্টিনাসহ যেসব দেশে সেবন বৈধ
ইম/