ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর সর্বশেষ অভিযানে গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী র মধ্য, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে একযোগে বিমান হামলা চালায়। নিহতদের অধিকাংশই সিটি ও উত্তর বাসিন্দা হলেও হামলার তীব্রতা ছিল উপত্যকার সর্বত্র। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) ঘাঁটি স্থাপন করে সেখান থেকেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার জন। সরকারি হিসাবে, নিহত ও আহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করা—এই দুটি লক্ষ্য পূরণের পথে ইসরায়েল এখন চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে এগোচ্ছে।” একইসঙ্গে তিনি জানান, হামলা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না এই লক্ষ্য পূরণ হয়।

তবে গাজায় চলমান সংঘাতের কারণে এবারের দিনটি ছিল ভিন্ন।
স্থানীয় একটি চার্চ থেকে ইহাব আয়াদ নামে এক ব্যক্তি জানান, আগে এই দিনে আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার রীতি থাকলেও এবার কেউ কারও সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। তিনি বলেন, “আমার অধিকাংশ বন্ধু ও আত্মীয়ের ঘরবাড়ি ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।”
এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। আলজাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ত্রাণ সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরায়েল এখনো তাতে সাড়া দেয়নি। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও চলছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল না করা এবং জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।”
পড়ুন: গাজায় ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ইসরায়েলের, আছে যেসব শর্ত
দেখুন: গা/জা/র শি/শু/দে/র চিৎকারে থামেনি ঘা/ত/কে/র বো/মা |
ইম/