নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সব কিছুকে পেছনে ফেলে নিজের সাফল্যের ধাপ অতিক্রম করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন চাঁদপুরের এক স্বপ্নবাজ নারী উদ্যোক্তা বাবলী আক্তার পিংকি। বর্তমানে যিনি শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ও চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড এন্ডাস্ট্রির আয়োজিত মেলায় স্টল নিয়ে ব্যবসা করছেন।
২৩ এপ্রিল বুধবার নারী উদ্যোক্তাদের মেলায় গেলে বাবলীকে বেচাকেনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
জানা যায়, বাবলী আক্তার পিংকি হচ্ছেন শহরের মাদ্রাসা রোডের মোঃ বাবুল সরকারের ৩ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে সবার বড়। ১৯৯১ সনের ৩ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া বাবলী ছোটবেলা হতেই রান্নার কাজে বেশ মনযোগী হয়ে উঠেন। আর সেই ইচ্ছাকেই আঁকড়ে ধরে তিনি নিজেকে একজন দক্ষ রন্ধন শিল্পী হিসেবে ভোজন রসিকদের কাছে মেলে ধরেছেন। যদিও তিনি এক সময় মেয়েদের শাড়ী ও থ্রীপিছ বিক্রির ব্যবসা শুরু করেও সফল হতে পারেননি।
বাবলীর পরিবার থেকে জানা যায়, রন্ধন শিল্পীর সফলতা আসে বাবলীর ২০২২ সালে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে। এরপর ২০২৩ সালে ‘মার্কস ডেজার্ট কুইন’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি সফল হন। ঐ বছরই চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড এন্ডাস্ট্রির আয়োজিত ‘ইলিশ রেসিপি’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেখানেও সফলতার ছোঁয়া রাখেন। তিনিই অনলাইনে ডাবের পানি দিয়ে নিজের বুদ্ধিতে তৈরিকৃত ডাবের পুডিং বিক্রি করে সাড়া ফেলেন। পাশাপাশি নকশি পিঠা, নারকেলের চিড়া, চিকেন রোল, চিকেন নার্গেস, চিকেন কাবাব, কেক, আমের আচার, জলপাইের আচার, রসুনের আচারও তিনি সম্পূর্ণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে মুখরোচকভাবে তৈরি করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার তৈরিকৃত এসকল খাবার নিয়েই তিনি এবারের মেলার স্টলে আগত ভোজন রসিকদের কাছে বেচাবেক্রিতে নজরে আসছেন।
বাবলী আক্তার পিংকি ভবিষ্যতে পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পরিকল্পনা নিচ্ছেন জানিয়ে বলেন, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার কৌশলগত পরিকল্পনা রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। যেখানে নারীরা একসাথে সহযোগিতামূলক পরিবেশে কাজ করতে পারবে। আমার প্রধান লক্ষ্য হলো আমার আগ্রহকে একটি টেকসই ও অভূতপূর্ব সফল পেশায় রূপান্তর করা। এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য নয় বরং সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি অর্থবহ পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে।
বাবলী আক্তার পিংকি বলেন, আমি একজন উদ্যোক্তা এবং একজন মা হিসেবে সমাজে নিজেকে এমন একজন সক্ষম ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যে ব্যক্তিগত ও পেশাগত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে সামলানোর পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য নারীদের সাবলম্বী করতে অনুপ্রেরণা যোগিয়ে তাদেরকে সাথে নিয়ে একসাথে যেনো এগুতে পারি। একজন মা হিসেবে বলবো, আমার ছেলে এবং মেয়েই আমার সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস এবং অটল মনোবলের প্রেরণা। আমি একজন নারী হিসেবে জন্ম নিয়ে গর্বিত। যদিও প্রথম দিকে আমি আমার কাজে পারিবারিক কোন সমর্থণ পাইনি। যেকারনে আমার পড়ালেখায় খুব চাপ পড়ায় এইচএসসির পর আর পড়ালেখায় এগুতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমি পারিবারিকভাবে এবং নিজেদের মেধা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করছি। আমার ঘরে তৈরিকৃত খাবার অনলাইনে বিক্রি করতে রাঁধুনি ডট কম নামে একটি ব্যবসায়িক পেইজ খুলে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবার কাছে দোয়া চাই যাতে সবসময় নিজের কাজের প্রতি মনবোল চাঙ্গা রেখে ব্যবসায়িক ও আর্থিক সফলতায় সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারি।
