চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি প্রণোদনার রাসায়নিক সার দোকানে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হলে আড়াই মেট্রিক টন বিক্রি করা সার দোকান থেকে ফেরত নেওয়া হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মহাডাঙ্গা এলাকার একটি দোকান ও আরেকটি বাড়ি থেকে ওই সার ফেরত নেওয়া হয়। ওই ইউনিয়নে প্রণোদনার সার বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে। সরকারি কৃষি প্রণোদনার সার বিক্রির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী।
মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনাইন বিন জামান দোকান থেকে সার ফিরিয়ে নেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের খরিপ-১ মৌসুমের প্রণোদনার অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ৬ হাজার ৫০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার-বীজ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। তালিকাভুক্ত প্রত্যেক কৃষককে ৫ কেজি করে ধান বীজ, ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হচ্ছে। একেক দিন একেক ইউনিয়নের কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে এসব সার-বীজ।
জানা গেছে, উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কৃষকদের দেওয়া সারের আড়াই মেট্রিক টন বিক্রি করে দেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব উদ্দীন। ওই সার বিক্রির জন্য কিনে নেন মহাডাঙ্গা এলাকার সার ব্যবসায়ী সাইফুল ট্রেডার্সের মালিক সাইফুল ইসলাম। বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার সন্ধ্যায় মহাডাঙ্গা এলাকার সাইফুল ট্রেডার্স ও অন্য একটি বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই মেট্রিক টন সার জব্দ করা হয়।
সারের ক্রেতা সাইফুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রাকিব বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব উদ্দীন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সার বিক্রির জন্য। প্রথমে কিছু না বুঝেই আমরা সারগুলো কিনে নিয়েছি। কিন্তু পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোকানে এসে সারগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যান।
আব্দুর রাকিব বলেন, সারগুলো প্রণোদনার সার, এটা আগে ওই কৃষি কর্মকর্তা বলেননি। এটা জানলে সেগুলো কিনতাম না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার কল দিলেও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব উদ্দীন সাড়া দেননি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনাইন বিন জামান বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহের পর নিরপেক্ষ বিতরণকারী উপস্থিতি সার বিতরণ করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তা নিরপেক্ষ বিতরণকারীর স্বাক্ষর জাল করে সারগুলো উত্তোলন করেছিলেন। সারগুলো উদ্ধারের পর কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে জেনেছি প্রণোদনার সার বিতরণ নিয়ে অনিয়ম ধরা পড়েছে। সরকারি প্রণোদনার সার কৃষিদের মাঝে বিতরণ না করে বিক্রি করা হয়েছে- এমন অভিযোগ আমি শুনেছি। আপাতত ওই ইউনিয়নে প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণ বন্ধ আছে।
ড. মো. ইয়াছিন আলী আরও জানান, প্রণোদনার সার বিক্রির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হচ্ছে। তদন্তের পরই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফ্রিজিং ভ্যানে লাশ আটকে রেখে সালিশ
দেখুন: সোলেমান হাজারী এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে
ইম/