চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক মাদক কারবারিকে আটকের পর টাকার বিনিময়ে সন্দেভাজন গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে সদর মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার রাতে নাঈম হাসান (২২) নামে এক মাদক কারবারিকে ৩ বোতল বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আটকের পর ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে বুধবার তাকে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। থানার একাধিক পুলিশ সদস্য বলেছেন, ওসি মতিউর রহমানের নির্দেশে জব্দ করা মদ গায়েব করে জামিনযোগ্য ধারায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়। কেননা, থানায় কোন আসামি আসার পর ওসির নির্দেশের বাইরে কিছুই হয়না। তবে ওসি বলছেন, মদসহ ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তিনি জানেন না। তাই তাকে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছেন। মাদক কারবারিকে আটক করে ঘুষের বিনিময়ে সুবিধা দেয়ার ঘটনায় খোদ থানা-পুলিশের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা অবহিত হয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত মাদক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাঁপাই ইনবাবগঞ্জ শহরের নতুনহাট এলাকা থেকে তিন বোতল বিদেশি মদ (রয়েল স্ট্যাগ) সহ নাঈম নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকবাটি উজ্জ্বলপাড়ার মো. বাদশা আলীর ছেলে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ সেকেন্ড অফিসার এসআই কবির হোসেন। সঙ্গে ছিলেন এএসআই আমিনুল ইসলামও। তবে জব্দকৃত বিদেশি মদ গায়েব করে পরদিন বুধবার (৯ এপ্রিল) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারায় নাঈম হাসানকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ওই যুবক বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া করছেন, মাদক মামলা হলে বিদেশ যেতে পারবেন না সেই সহানুভূতি থেকে তাকে সন্দেভাজন গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে স্বীকার করেছে পুলিশ। যদিও সদর মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগ পুরনো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পুলিশ ঘুরে দাঁড়ালেও মাদক উদ্ধারে জেলা পুলিশের তেমন সাফল্য নেই।
চাঁপাই মাদক উদ্ধার অভিযানে প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দীন জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে বিদেশি মদসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন শুনছি ওই এলাকাতেই আছে। তার দাবি, মাদকসহ আটকের পর এভাবে ছাড়া পেলে এ এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা আরো উৎসাহিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুঠোফোনে এসআই কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিদেশিসহ গ্রেপ্তার নাঈম হাসানকে আদালতে চালান করা হয়েছে বলে জানান। তবে আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাকে মাদক মামলায় নয়, আদালতে সোপর্দ করা হয় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারায়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নিজেই যোগাযোগ করেন এসআই কবির হোসেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মদসহ গ্রেপ্তারের পর ১৫১ ধারায় চালান হয় কিভাবে। মদ গেল কোথায়? উত্তরে এসআই কবির বলেন, এটা অনেক ফ্যাকড়া (জটিলতা) আছে আপনাকে স্বাক্ষাতে বলবো। অন্য প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই ছেলেটা বিদেশ যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। মামলা দিলে আর বিদেশ যেতে পারতেন না, এ জন্য একটু ছাড় দেয়া হয়েছে। পরে ১ লাখ টাকা নেয়ার কথাও স্বীকার করেন এসআই কবির হোসেন।
মামলার কাজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সদর মডেল থানার ৪৪৮ নং জিডি মূলে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের মাধ্যমে ওই যুবককে আদালতে সোপর্দ করেন এসআই হরেন্দ্রনাথ দেবদাশ। আদালতে দেয়া পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় সন্দেহভাজন গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও স্বাক্ষী করা হয়েছে সদর মডেল থানার পরিচ্ছন্নতা কর্মী শ্রী জনি ভুঁইমালীকে। শ্রী জনি বলছেন, তিনি সদর মডেল থানার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ঘটনাস্থালেও ছিলেন না। তাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে এটিও অবগত নন। আরেকজন স্বাক্ষী আশরাফুল ইসলাম ফারুকের মোবাইল নাম্বার অসম্পন্ন থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. মতিউর রহমান বলেন, একটা আসামি ১৫১ ধারায় চালান দেয়া হয়েছে এটা আমার নলেজে আছে। আমি ফারওয়ার্ড করেছি। তবে মদসহ গ্রেপ্তারের বিষয়টা আমার জানা নেই।
পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিখোঁজ হোটেল শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার
দেখুন:ঈদের ছুটিতে পর্যটক মুখর বান্দরবান |
ইম/