ভবিষ্যতের ভাবনা, দৃঢ় বন্ধন, একে অপরের প্রতি সহযোগীতার মনোভাব এবং পাশে দাড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীদের এক ঈদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠান হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের তিন তারকা মানের হোটেল সাহিদ প্যালেসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মূলত এই আয়োজনের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার্থীরা এক প্লাটফর্মে কাজ শুরু করলেন। চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান বিশ্বের প্রবাসী বাঙালীদের সবথেকে বড় সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ও বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুরের (বিডিচ্যাম) প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিকের পৃষ্ঠপোষকতায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠন প্রায় তিন দশক পর আবারও কার্যক্রম শুরু করলো।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তথা সহযোগীতার জন্য পাশে দাড়াঁতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি প্লাটফর্ম করার চেষ্টা করছিলেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি (ডুসাক), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়স্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়স্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির শিক্ষার্থীরা এ স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এনআরবি ওয়ার্ল্ড ও বিডিচ্যামের প্রেসিডেন্ট তথা নব্বইয়ের দশকে ডুসাক ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং এক সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্র সাহিদুজ্জামান টরিকের পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষার্থীদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো। এদিনই শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও সাত কলেজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নোবেল ইসলাম সূর্যকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসাক) সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমেদকে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চুয়াডাঙ্গা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক যুক্ত হবেন।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে হোটেল সাহিদ প্যালেস চত্বর হতে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে চুয়াডাঙ্গার রাজ পথ। প্রায় পাঁচ শতাধিক তরুণ—তরুণীর অংশ নেয়া এ শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ করে বড় বাজার চৌরাস্তার মোড় ঘুরে পুনরায় সাহিদ প্যালেস চত্বরে এসে শেষ হয়। ‘এসো মিলি নাড়ির টানে, চুয়াডাঙ্গার ঐক্যতানে’ স্লোগানে হোটেল সাহিদ প্যালেসের রাফেল কনভেনশন সেন্টার এন্ড কমিউনিটি সেন্টারে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন নতুন করে উজ্জিবিত হওয়া চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির পৃষ্ঠপোষক সাহিদুজ্জামান টরিক।
স্বাগত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সাহিদুজ্জামান টরিক বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার সন্তানরা দেশের সেরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। একসাথে থেকে আমরা পারি এক নতুন চুয়াডাঙ্গা গড়তে। এই মিলনমেলা হোক তোমাদের সেই পথচলার সূচনা।’
তিনি বলেন, ‘তোমরা আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছ— ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা কিংবা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছো কেউ কেউ। কিন্তু আমাদের সবার হৃদয়ে যে জায়গাটা একেবারে কেন্দ্রে, তা হলো আমাদের চুয়াডাঙ্গা। আমি বিশ্বাস করি—শুধু ঈদের আনন্দে নয়, এই আয়োজন হোক তোমাদের দীর্ঘ পথচলার সূচনা। আমাদের মধ্যে থাকা বন্ধনটিকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। কারণ এই বিশাল শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক কেবল বন্ধুত্বের জন্য নয়, চুয়াডাঙ্গা জেলার সার্বিক অগ্রযাত্রার সহযোদ্ধা হয়ে উঠতে পারে।’
সাহিদুজ্জামান টরিক বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিবছর অন্তত দুটি মিলনমেলার আয়োজন করা হবে, একটি ইফতার মাহফিল, আরেকটি ঈদ বা পুনর্মিলনী। নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞরা পরামর্শ দেবেন, তথ্য দিয়ে পাশে থাকবেন। একইসাথে মেধাবী ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করবো আমরা নিজেরাই। আগামী দিনগুলোয় আমরা চাই—এই নেটওয়ার্ক চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্য সারাদেশজুড়ে একটি শক্ত কাঠামো হয়ে উঠুক। শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা সাধারণ সেবা—যেকোনো জায়গায় যেন চুয়াডাঙ্গাবাসী সর্বোচ্চ সহায়তা পান। একজন অসহায় যখন হাত বাড়াবেন, তখন যেন আরেকজন চুয়াডাঙ্গাবাসী সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়ান। সেই সেবার হাত তোমরাই হবে।’
স্বপ্ন দেখা নিয়ে সাহিদুজ্জামান টরিক বলেন, ‘তোমরা আজ শিক্ষার্থী, কিন্তু আগামী দিনে কেউ হবেন ব্যবসায়ী, কেউ বিসিএস ক্যাডার, কেউ উদ্যোক্তা, আবার কেউ জনপ্রতিনিধি। যার যার অবস্থান থেকে আমরা যদি চুয়াডাঙ্গার কথা মনে রাখি, তাহলে এই জেলার চেহারা পাল্টে যাবে। আমাদের লক্ষ একটাই—সবার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার ঐক্য, সম্মান ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরা। প্রতি বছর সকলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে, যাতে নেতৃত্ব আসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, উৎসবমুখর পরিবেশে। এই নেটওয়ার্ক হবে স্বতন্ত্র, মুক্ত ও স্বপ্নময়—যেখানে নেতৃত্ব মানে হবে সেবা, আর বন্ধন মানে হবে দায়িত্ব। আমরা এমন একটি সময়ের স্বপ্ন দেখি—যখন দেশের যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো সংকটে, ‘আমি চুয়াডাঙ্গার’ এই পরিচয়টাই কারও জন্য ভরসা হয়ে দাঁড়াবে। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাতিয়ার হবে তোমরা—চুয়াডাঙ্গার ছাত্রসমাজ।’
সাহিদুজ্জামান টরিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসো, আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি এমন একটি শক্ত ভীত—যার ওপর দাঁড়িয়ে আমরা চুয়াডাঙ্গাকে এগিয়ে নিতে পারি, দেশের অন্যদের জন্যও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারি।’
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ডুসাক সভাপতি মোস্তফা ইকবাল হৃদয় বলেন, ‘এই মিলনমেলা যেন একটা পরিবার। আমরা যেন আবার নিজের ঘরে ফিরে এসেছি। এই আয়োজনে আমরা শুধু পুনর্মিলনীতে নিজেকে নয়, নিজের শেকড়কেও খুঁজে পেলাম।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিগার নিশাথ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার তরুণদের এই পুনর্মিলনী। তাই শুধু একটা অনুষ্ঠান নয়, ছিল হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দেওয়া—নিজেকে, নিজের জেলা ও ভবিষ্যৎকে একসূত্রে গাঁথার এক প্রয়াস। এই প্রয়াসের স্বপ্ন দেখিয়ে সাহিদুজ্জামান টরিক স্যার আমাদেরকে কৃতজ্ঞ করেছেন। এমন মেধাবী এবং পরিশ্রমী মানুষের সাক্ষাৎ পাওয়া এবং তার সঙ্গে এমন আয়োজনে সময় পার করার অনুভূতি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবুজ আহম্মেদ, সাত কলেজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নোবেল ইসলাম সূর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব আলমডাঙ্গার সভাপতি হাসান আল নোমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিগার নিশাত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএইচ হৃদয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদেক মুনিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেদোয়ান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মেজবাউল হক, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি উমে মাহবুবা, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ডুসাক সহ-সভাপতি ওয়াসির আল মাসতুর, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রহমান মোল্লা, সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী আসিফ আলমগীর।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডুসাক) সভাপতি মোস্তফা ইকবাল হৃদয় ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমেদ। পরে বিকেলে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির নেতৃত্বে এলেন কারা? কি তাদের পরিচয়?
দ্বিতীয় পর্বে দুপুরের খাবারের পর নবগঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি ঢাকা’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও সাত কলেজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নোবেল ইসলাম সূর্য। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডুসাক) সভাপতি মোস্তফা ইকবাল হৃদয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিগার রিশাত এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিদ রিচকে।
সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ডুসাকের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমেদ। যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ডুসাকের সহ-সভাপতি ওয়াসির আল মাসতুর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবুজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শাহীন হোসেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব হাসান। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আল নোমান।
এছাড়াও কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি উম্মে হাবীবা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়ীতা সেন।
পড়ুন: চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে গরু চোরাচালান ও চামড়া পাচার রোধে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
এস