১৫/০৭/২০২৫, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ
30.3 C
Dhaka
১৫/০৭/২০২৫, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চুয়াডাঙ্গার সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ছেলুন জোয়ার্দ্দারের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন আর নেই। শুক্রবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন ছেলুন জোয়ার্দ্দার। সম্প্রতি ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্ট থেকে সরিয়ে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদুল হক বিশ্বাস।

উইকিপিডিয়ার তথ্যে ১৯৪৬ সালের ১৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা শহরের আরামপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। তার বাবা ছিলেন সিরাজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার এবং মা আছিয়া খাতুন। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। চুয়াডাঙ্গা মহকুমা ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করে পরবর্তীতে যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন এবং পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ছেলুন জোয়ার্দ্দার। শুধু রাজনীতি নয়, সমাজসেবা ও ক্রীড়াক্ষেত্রেও তিনি রেখেছেন অবদান। চুয়াডাঙ্গা রাইফেল ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন বহু বছর।

তিনি ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে থেকে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং এমপি হোন তিনি। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের ভোটের কারণে সমালোচিত হোন তিনি। তবে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তাকে চুয়াডাঙ্গায় প্রকাশ্যে দেখা যায়। এরপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে উঠলে তিনি ঢাকা চলে যান এবং আর ফিরে আসেননি নিজ এলাকায়।

তার প্রস্থানে চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়। প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ, রাজনৈতিক সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

এক সময় যে মানুষটি চুয়াডাঙ্গার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ হাতে রেখেছিলেন, সেই মানুষটিকে এবার বিদায় জানাতে প্রস্তুত তারই প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। তবে তার পরিবারের অনেকে বিদেশে থাকায় ও বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় সবাই তার জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেবিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার (১৪ জুন) বেলা ১১টায় ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা শহরের জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন করা হবে।

এদিকে, সাবেক এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দারের মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গার সামাজিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তবে শোক জানানোর ক্ষেত্রেও অনেকে নাম প্রকাশে ইচ্ছুক হননি।

পড়ুন : চুয়াডাঙ্গার নয়মাইলে পাখিভ্যানকে চাপা দিয়ে পালাল পরিবহন, ঘটনাস্থলেই নিহত ২

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন