মৌসুমের শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য বায়ার্ন মিউনিখ এবার ইউরোপিয়ান ফুটবলে নতুন ইতিহাস লিখেছে। টানা ১৬ ম্যাচ জিতে ইউরোপিয়ান রেকর্ড গড়েছে তারা। গতকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতে প্যারিসের পার্ক দে প্রিন্সে স্বাগতিক পিএসজিকে ২–১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে অপরাজিত ধারার পাশাপাশি গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করেছে জার্মান জায়ান্টরা।
ম্যাচে ছিল নাটক, উত্তেজনা, গোল এবং ভাগ্যের নাটকীয় মোড়। ১০ জনের দল নিয়েও জয় ছিনিয়ে নেয় বায়ার্ন, আর জয়ের নায়ক ছিলেন কলম্বিয়ান উইঙ্গার লুইস দিয়াজ—যিনি দুটি গোল করার পরই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।
শুরুতেই গোল, তারপর দাপট
খেলার শুরু থেকেই বায়ার্ন ছিল আগ্রাসী মেজাজে। মাত্র ৪ মিনিটেই গোলের সূচনা করেন দিয়াজ। মাইকেল ওলিসের নেওয়া শট পিএসজি গোলরক্ষক লুকাহ শুভালিয়ে ফিরিয়ে দিলেও রিবাউন্ডে বল পেয়ে জালে পাঠান দিয়াজ।
গোল হজমের পর দ্রুত ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে লুইস এনরিকের দল। ২১ মিনিটে উসমান দেম্বেলে বল জালে পাঠালেও ভিএআরে অফসাইড ধরা পড়ায় গোল বাতিল হয়। আরও দুর্ভাগ্য, ২৫ মিনিটেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় দেম্বেলেকে।
৩১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিয়াজ। পিএসজি ডিফেন্ডার মারকিনিওসের ভুলে বল পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জালে পাঠান তিনি। বায়ার্ন তখন ২–০ গোলে এগিয়ে। কয়েক মিনিট পরই তৃতীয় গোলের সুযোগ এসেছিল, কিন্তু বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
লাল কার্ডে ম্যাচের রঙ বদল
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ম্যাচের গতি পাল্টে যায়। পিএসজি তারকা আশরাফ হাকিমির সঙ্গে বল দখলে লড়াইয়ে কড়া ট্যাকেল করেন দিয়াজ। প্রথমে রেফারি হলুদ কার্ড দেখালেও ভিএআর পর্যালোচনার পর সেটিকে লাল কার্ডে রূপান্তর করেন ইতালিয়ান রেফারি মউরিসিও মারিয়ানি। হাঁটুতে চোট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন হাকিমি, আর বায়ার্নকে খেলতে হয় ১০ জন নিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজির আক্রমণ, কিন্তু ফল মেলেনি
একজন বেশি নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করেই আক্রমণে ঝাঁপায় পিএসজি। ৬৩ মিনিটে খিচা কাভারাস্কেইয়া এবং ৬৫ মিনিটে বদলি গনজালো রামোস ভালো সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি কেউই।
অবশেষে ৭৪ মিনিটে বদলি জোয়াও নেভেসের দারুণ বাইসাইকেল কিকে ব্যবধান কমায় পিএসজি। লি কাং–ইনের নিখুঁত ক্রসে ভলিতে গোলটি করেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। তবে এরপর আর কোনো গোল করতে পারেনি স্বাগতিক দল।
পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট বায়ার্নের কার্যকারিতা
পুরো ম্যাচে বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল পিএসজি—৭১ শতাংশ পজেশন এবং ২৫টি শট (৯টি অন–টার্গেট)। বিপরীতে বায়ার্নের ছিল মাত্র ৯টি শট, তবে ৫টিই ছিল লক্ষ্যে। কার্যকারিতায় তাই বায়ার্নের জয় একেবারেই প্রাপ্য।
এই জয়ে টানা ১৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে নতুন রেকর্ড গড়ল বায়ার্ন মিউনিখ, আর ইউরোপে নিজেদের আধিপত্যের বার্তা আরও একবার জানিয়ে দিল তারা।
পড়ুন: রিয়ালকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিলেন আর্জেন্টাইন ম্যাক-অ্যালিস্টার
আর/


