29.5 C
Dhaka
বুধবার, মার্চ ২৬, ২০২৫

ড. ইউনূসের সামনে চ্যালেঞ্জ বেড়েই চলেছে, কমছে না!

হাসিনা সরকারের পতনের পর, দেশব্যাপী একটি নতুন শুরুর আশা জাগে, তবে অন্তর্বর্তী সরকার একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই চলছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পর দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরানোর চেষ্টা করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন বাংলাদেশ গঠনে চ্যালেঞ্জ বেড়েই যাচ্ছে, কমছে না। কিন্তু কেন?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেছেন, দেশে ফিরেই তিনি দেখতে পান যে, প্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়েছে। পুলিশের একটি বড় অংশ জনরোষ ও ফৌজদারি মামলার ভয়ে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছে, ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছিলেন, তারা এই পরিবর্তনকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না, যা উত্তেজনাকে আরও উসকে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের চলমান অবস্থা আর অন্তর্বর্তী সরকারের আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আগ্রহই সবচেয়ে বেশি। অথচ ড. ইউনূস এবং তার উপদেষ্টারা বিদেশি মিডিয়ায় নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। যা এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে না। হাতে গোনা দুই একটি বাংলাদেশি মিডিয়ার বাইরে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন না কেউই। এই বৈষম্য নিয়েও মাঝে মাঝে মন্তব্য ভাসছে সমাজপাতায়।

দ্য গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, নতুন সরকারের অধীনে প্রশাসন সংস্কার করা হচ্ছে, যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হলো একটি সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষা পাবে। কিন্তু তা সহজ হবে না, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেশের প্রশাসনকে দুর্বল করে দিয়েছে।

দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষত, গ্যাং অপরাধ বেড়ে গেছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় চরমপন্থী দলগুলোও তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করছে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি বলেছেন যে দেশে “বিশৃঙ্খলা” চলছে, যা সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে অনেকে মনে করছেন। যদিও ইউনূস দাবি করেছেন যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক “খুব ভালো”, কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে।

দেশের অর্থনীতির অবস্থা বিপর্যস্ত। যেখানে শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যাংক লুটের মাধ্যমে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এই অর্থ কেলেঙ্কারিতে আন্তর্জাতিক তদন্ত চলছে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ডে। শেখ হাসিনার ভাতিজি এবং যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের নামও এই দুর্নীতির তদন্তে উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে ইউনূস কিছু বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। দিল্লি ঢাকার ওপর নানা কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং সম্প্রতি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে “সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিক করার” অভিযোগ তুলেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হাসিনার বিদায়ের পর থেকে সংকটের মুখে পড়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরাগমন ইউনূসের জন্য নতুন একটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বাইডেন প্রশাসন ইউনূসকে সমর্থন করেছিল, কিন্তু ট্রাম্পের প্রশাসন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

দেশের পরিস্থিতি এখনো অস্থির। ডক্টর ইউনূস আশাবাদী যে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি দ্রুত সমাধান করা না গেলে, ইউনূস সরকারের ওপর জনগণের আস্থা দুর্বল হতে পারে। যা সামরিক শাসনকে অবশ্যম্ভাবি  করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনএ/

দেখুন: ড. ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ করেই বিয়ে বিচ্ছেদের খবরও দিলেন জয়!

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন