33 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫

সংস্কারের মুখে রোষানলে প্রশাসন ক্যাডার

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশ নিয়ে প্রশাসনে অস্থিরতার শেষ নেই। ২৬টি ক্যাডারের কোনো ক্যাডারই কমিশনের সুপারিশে খুশি হতে পারছেন না। বিশেষ করে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোটা বাড়ানো-কমানো নিয়ে সবচেয়ে বেশি নাখোশ হয়েছে প্রশাসন ক্যাডার।

দেশের পুরো প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারটি এবার বেশ চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) এবং দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসক এরই মধ্যে সংস্কার কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়েছে। গত রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের দপ্তরের সামনে বড় জমায়েত করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে কোনো ধরনের ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন। মূলত সম্ভাব্য সংস্কারের মুখে ‘চাপ’ অনুভব থেকেই তারা মাঠে নেমেছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তবে প্রশাসন ক্যাডার কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছে না বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, চাপে থাকার প্রশ্নই আসে না।

প্রশাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রশাসন নিয়ে অতীতে একাধিক কমিশন হয়েছিল। সেসব কমিশনের সুপারিশ কখনো আলোর মুখ দেখেনি। এবারের সংস্কার কমিশনের সুপারিশও বাস্তবায়ন হবে কি না তা বলা মুশকিল। কারণ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই এ সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে। সুতরাং তারা তাদের ক্যাডারের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো বিষয় বাস্তবায়ন করবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবেই প্রশাসন সংস্কারে হাত দিতে হবে।

জনপ্রশাসন বিশ্লেষক ও সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন  জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অনাহূত একটি বিষয় সামনে এনে গন্ডগোলের ব্যবস্থা করেছে। সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি)-এ কিন্তু অন্য ক্যাডারের প্রবেশাধিকার ছিল না। তার ওপর ৪০তম বিসিএস থেকে কোটা প্রথা বাতিল হয়েছে। যেখানে নতুন করে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে অন্য ক্যাডারের কোটা বাতিল হওয়ার কথা, সেখানে কোটা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একেবারেই হঠকারী। এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালয়শিয়াসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের পদে অন্য ক্যাডার থেকে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এটি কমিশনকে বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে সাবেক সচিব আউয়াল মজুমদার বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের আমলেও সিনিয়র সার্ভিস পুল (উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব) পদোন্নতিতে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল। পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্রও ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এটি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা-মোকদ্দমাও হয়। সুতরাং এবারও পরীক্ষার বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে বলে মনে হয় না।

কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশের প্রতিবাদ,  গত ১৭ ডিসেম্বর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের বক্তব্যে ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দেয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য বিদ্যমান ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশের বিষয়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি। সংগঠনটি মনে করে, একটি জনমুখী, দক্ষ, নিরপেক্ষ এবং যুগোপযোগী জনপ্রশাসন বিনির্মাণে প্রজাতন্ত্রের সর্বনিম্নতম বেতন গ্রেডের কর্মচারী থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বেতন গ্রেডের কর্মকর্তা পর্যন্ত বিবেচনা করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে সমন্বিত সুপারিশ প্রণয়ন করাই কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া আবশ্যক। উপসচিব পদোন্নতি প্রত্যাশী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতামত জরিপ কিংবা সমীক্ষার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি। প্রশাসনসহ সব স্তরে কর্মরত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএএসএ কমিশন প্রধানের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

২৫ ক্যাডারের কর্মবিরতি পালন: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত উপসচিব পুলে কোটা পদ্ধতি বহাল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বহির্ভূতকরণের প্রতিবাদ এবং পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছে সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন

পরিষদ’-এর আহ্বানে সারা দেশে ২৫ ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত সব দপ্তরে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রশাসন ক্যাডার বাদে বাকি ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করার সুপারিশ করে। ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পরিষদ কলম বিরতি ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসে নিজ নিজ কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি, ৪ জানুয়ারি ২০২৫ ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন। সেখান থেকে বড় কর্মসূচি দেবে সংগঠনটি।

প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পরামর্শ: শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে কর্মকর্তারা পদ-পদবি আদায়ে মাঠে নেমেছেন। একের পর এক কর্মসূচিতে প্রশাসনে নানা অস্থিরতা বিরাজ করছে। নতুন করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশে ক্ষুব্ধ সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা। কমিশনের সংস্কারের মুখে চাপে পড়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে তারা সচিবালয়ে নজিরবিহীন জমায়েতও করেছে। তবে এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

এনএ/

আরও পড়ুন: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের পদত্যাগ দাবি

দেখুন: পদত্যাগের দাবি নয়, শিক্ষককে সসম্মানে ফেরালেন শিক্ষার্থীরা 

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন