ঝিমিয়ে পড়া চাঁদপুর লঞ্চঘাট নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুনরায় জমজমাট হয়ে উঠেছে। সুসজ্জিত ঘাট, চমৎকার আলোকসজ্জা, সিসি ক্যামেরা ও বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতায় দিনে নির্বিগ্নে গড়ে অর্ধ লক্ষ মানুষ এখান দিয়ে যাতায়াত করছে।
১৫ জুন রোববার দিবাগত রাতে ঘাট জমজমাট হওয়ার কারন জানিয়েছেন নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ চাঁদপুরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য।
তিনি জানান, ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে মানুষ ফেরার জন্য লঞ্চকে গুরুত্ব দেয়ায় ঘাট জমজমাট। বর্তমানে চাঁদপুর ঢাকা নৌরুটসহ অন্যান্য স্থানে বড় বড় ৩০টি লঞ্চ যাত্রী পারাপার করছে। এছাড়াও চাঁদপুর নারায়ণগঞ্জ নৌরুটে ছোট ১৬টি লঞ্চ যাত্রী পারাপার করছে। ছোট লঞ্চগুলো বাদে বড় লঞ্চ সকালের ভোর ৬টা হতে শুরু করে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলাচল করছে। তবে দূর দূরান্তের কিছু লঞ্চ আরো গভীর রাতেও ঘাটে ভীরছে।
তিনি আরও জানান, বড় ছোট সব লঞ্চেই ফায়ার স্টিং হুইশার, বয়াসহ নিরাপত্তা সারঞ্জামাদি প্রতিনিয়ত আমরা তদারকি করছি। তাছাড়া ভাড়া ও যাত্রী অতিরিক্ত কিনা সেটাও দেখভাল করতে আমিসহ নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের অন্তত ১০ জন নিরছিদ্র নিরাপত্তায় কাজ করছি।
নিরব নামে এক যাত্রী জানান, চাঁদপুর ঢাকায় লঞ্চে করে মাত্র ১৮০ টাকায় যাওয়া আসা করা যাচ্ছে। ঘাটে নামলেই খাওয়া দাওয়ারও বেশ কিছু হোটেল থাকায় অসুবিধা হচ্ছে না। ঘাটের সামনে অটো সিএনজি চালকদেরও হয়রানী অনেকটা নিয়ন্ত্রণে দেখলাম। তবে লঞ্চগুলো ঢাকা চাঁদপুর আসা যাওয়ায় ৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগাচ্ছে যা বিরক্তিকর। এটা আরও কমিয়ে আনলে নদীতে নিরাপদ এই লঞ্চযাত্রায় যাত্রীরা আরও স্বস্তি পেতো।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বাছির আলি খান বলেন, ঈদ পরবর্তী সময়ে কর্মব্যস্ত মানুষের কল্যাণে যাত্রী সাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে বি আই ডব্লিউ টি এ’র সুনাম ধরে রাখতে নিয়মিত তদারকি অব্যাহত রেখেছি। এই ঘাট দিয়ে দিনে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ যাতায়াত করছে। মূলত সময় কতক্ষণ লাগে সেটা বড় কথা নয় বরং যারা নিরাপদ নৌ ভ্রমণ প্রেমী তারা নিরিবিলি যাত্রা হিসেবেই নৌপথ ব্যবহার করছে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার রকিব উদ্দিন বলেন, ঈদ এলেই আমরা এখানে পুলিশের পক্ষ থেকে জরুরী তদারকির জন্য কন্ট্রোল রুম চালু রাখি। এতে করে নৌপথে অপরাধ প্রবনতা অনেকটা কমে এসেছে। যার কারনে এখানকার লঞ্চঘাটে যাত্রীদের আসা যাওয়ার আনাগোনা বেড়েছে। তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের এই লঞ্চঘাট যাত্রীসেবায় অন্যন্য নজির হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি রয়েছে। যা অব্যাহত রাখতে পুলিশ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটকে সাথে নিয়ে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার ছৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, নৌপথে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির অপতৎপরতা রোধে ট্রহল নিয়মিত চলছে। লঞ্চ ও জাহাজে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, বড় অংকের নগদ অর্থ বা মূল্যবান জিনিস বহনের ক্ষেত্রে নৌ পুলিশ সহায়তা দিচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টার্মিনালে প্রবেশের সময় তল্লাশি জোরদার, লঞ্চে ভ্রমণকারী কেবিন যাত্রীদের পূর্ণ তথ্য রেজিস্টারে সংরক্ষণ, যাত্রী টিকিটে নাম-ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য রাখা, সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ এবং লঞ্চ ছাড়ার আগে যাত্রীদের স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া লঞ্চের স্টাফদের ওপরও নজরদারি বাড়ানোয় এখন এই লঞ্চঘাট জমজমাট।
পড়ুন: একাই সংসারের ঘানি টানছেন দুই পা হারা চাঁদপুরের রফিজ উদ্দিন
এস