26 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫

জহির রায়হানের কালজয়ী পাঁচ সিনেমা

জহির রায়হান ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। শুরুটা হয়েছিল বিপ্লবী সাহিত্য দিয়ে। একসময় চলচ্চিত্রকেই শিল্পচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন।

হয়ে ওঠেন এ দেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের চিরস্মরণীয় নাম। আজ তার অন্তর্ধান দিবস। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি রবিবার সকালে অজ্ঞাত টেলিফোন কলের ডাকে ছুটে যাওয়ার পর আর জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাত্র ৩৭ বছর জীবনের পরিধি ছিল জহির রায়হানের। জহির রায়হানের তিরোধানের দিনে রইল তার নির্মিত পাঁচ সিনেমার কথা।

কাঁচের দেয়াল

জহির রায়হানের মুক্তিযুদ্ধপূর্বে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কাঁচের দেয়াল’। চলচ্চিত্রটির মুক্তির কাল ১৮ জানুয়ারি ১৯৬৩ সাল। যার রিল টাইম ৯১ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো–‘মানুষ যতই আপন হোক না কেন, প্রত্যেকেই স্বার্থের নিগড়ে বাধা। স্বার্থছাড়া মানুষ একপাও সামনের দিকে এগোয় না। স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে মানুষ তার আচরণকে পরিচালিত করে। চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায় অসহায় এক তরুণী মামার বাড়িতে লালিত-পালিত। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা হয়ে যায় বাউন্ডুলে। মামার পরিবারে মেয়েটির লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শেষ নেই। তবে এক মামা(মামির ভাই) ও মামাতো ভাই(ভালোবাসে) তাকে আলাদা চোখে দেখে। মেয়েটি হঠাৎ লটারিতে অনেক টাকা পেয়ে যায়। এ সময় মামার পরিবারে তার আদর-যত্নও বেড়ে যায়। কিছুদিন পরেই সংবাদ আসে যে লটারি মিথ্যে। মেয়েটির ভাগ্যে আবার দুর্ভোগ নেমে আসে। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ করে এবং বাড়ি থেকে কাচের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে পড়ে।’ সিনেমাটির  গীত, কণ্ঠ ও সংগীতে ছিলেন খান আতাউর রহমান।

জীবন থেকে নেয়া

জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির গল্প ছিল যেন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এক সাংস্কৃতিক মুখবন্ধ। একটি দেশ। একটি সংসার। একটি চাবির গোছা। একটি আন্দোলন। নান্দনিক পোস্টারের এ স্লোগান পড়ে মনে হতে পারে কয়েকজন নারী আর একটি চাবির গোছা নিয়ে এক আটপৌরে বাঙালি পরিবারের গল্প। কিন্তু সেটি ছিল আসলে একটি রাষ্ট্রের গল্প। রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ের গল্প। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমির গল্প। জহির রায়হানের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় আনিস ফিল্মস করপোরেশনের পরিবেশনায় ১৯৭০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। তখনকার চলচ্চিত্রের গুণীদের মধ্যে কে ছিলেন না ছবিটিতে! সবার আগে কান্ডারি জহির রায়হান। ছিলেন খান আতাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর, রওশন জামিল, রাজ্জাক, রোজী সামাদ, আমজাদ হোসেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া। এটি জহির রায়হানের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বলেও বিবেচিত।

বেহুলা

জহির রায়হানের আরেকটি কালজয়ী নির্মাণ। জহির রায়হান ছিলেন ছবিটির চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। ছবিটি নির্মিত হয়েছে বাংলার প্রচলিত লোককাহিনী, হিন্দু পুরাণ মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান অবলম্বনে। অভিনয় করেন সুচন্দা, রাজ্জাক, সুমিতা দেবী, ফতেহ লোহানী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, আমজাদ হোসেন প্রমুখ।

সঙ্গম 

১৯৬৪ সালে তার নির্মিত উর্দু চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ ছিল পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র। এ ছবিতে অভিনয় করেন রোজী সামাদ, হারুন রশীদ, খলিলুল্লাহ খান, সুমিতা দেবী প্রমুখ।

কখনো আসেনি

জহির রায়হান নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন সুমিতা দেবী, খান আতাউর রহমান, সঞ্জীব দত্ত, শবনম, কণা। এ ছবিটিতে একজন ব্যর্থ ব্যক্তির জীবনে ঘটে যাওয়া করুণ কিছু কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তির দিনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘দেশের জনসাধারণ ২০ বছর পর যে ছবি দেখবে বলে আশা করেছিল, ২০ বছর আগেই দেশের তরুণরা সে ছবি তাদের উপহার দিল।’

পড়ুন: জহির রায়হানের ‘কখনো আসেনি’

দেখুন: আসছে তৌকির আহমেদের সিনেমা স্ফুলিঙ্গ

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন