জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সাবেক সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে করা হয়েছিল।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাবেক সরকারের নৃশংসতা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে হাইকমিশনার এ কথা বলেন।
প্রতিবেদনে হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে
ভলকার তুর্ক জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এই বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি দল পাঠিয়েছিল, যা স্বাধীনভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে ওই সময়ের হত্যাকাণ্ড, সহিংসতা ও নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই দলটির মধ্যে ছিলেন মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, ফরেনসিক চিকিৎসক এবং অস্ত্র বিশেষজ্ঞ। দলটি জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত মরণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যেহেতু এই সহিংসতা রাষ্ট্রীয় সহিংসতার একটি অংশ ছিল, সেহেতু এর মাধ্যমে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ঘটেছে। জাতিসংঘ এই সময়কার সহিংসতা, নৃশংসতার পদ্ধতিগত নিপীড়ন এবং নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছে এবং ন্যায়বিচারের জন্য তা তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধও গঠন করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিস্তারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সময়কার সংঘটিত ভয়াবহ অন্যায়গুলোর সত্য উন্মোচন, নিরাময় এবং জবাবদিহিতার মুখোমুখি হওয়া প্রয়োজন। তুর্ক জানান, তার কার্যালয় এই জাতীয় জবাবদিহিতা এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি এক বিশাল আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে জাতীয় নিরাময় এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের হাইকমিশনার আরও বলেছেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার প্রতিকার করা এবং এর পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনও না ঘটতে পারে তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে জরুরি।
সাবেক সরকারের এই নৃশংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন থেকে আরও তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রশ্ন ওঠে, এই ধরনের সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন কীভাবে প্রতিরোধ করা যাবে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি আর তৈরি না হয়, সে জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
পড়ুন:বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে: খন্দকার মোশাররফ
দেখুন:কী কী ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির? |
ইম/