ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে- এমন আশ্বাসে তথাকথিত অহিংস গণঅভ্যুত্থানের ব্যানারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ জড়ো করার চেষ্টা হয় রাজধানীর শাহবাগ ও টিএসসি এলাকায়। রাতে কয়েকটি বাস এবং মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় আসে হাজার হাজার মানুষ। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষার্থীরা সেসব বাস ফিরিয়ে দেয়।
রোববার রাতে ‘অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের কথিত সেই সমাবেশে নেওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তিন শতাধিক নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীকে একত্রিত করা হয়। জেলার কমলনগর উপজেলার করইতলা বাজারে ঘটনাটি ঘটে।
রাতেই স্থানীয়রা তাদেরকে ঘেরাও করে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে তিনটি চেয়ার কোচ বাস ও চারটি মাইক্রোবাস জব্দ করে। এ সময় ১১ জনকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
বাসযাত্রী নারী-পুরুষরা জানান, একটি চক্র সোমবার ঢাকার শাহবাগ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। ঋণের আবেদন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা এক হাজার টাকা করে নিয়েছে। ঋণপ্রত্যাশী ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য দেওয়া হয়েছে টোকেন। টোকেনধারী সবাইকে দেওয়া হবে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ।

আলেয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা শাহবাগে একটি সমাবেশে যোগ দিতে লোকজন নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেখানে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নিকট তারা প্রস্তাব দেবেন। ওই টাকা থেকে তাদের মতো গ্রামের নারী-পুরুষদের ১ লাখ থেকে বড় অংকের টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে।
করইতলা বাজার এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ আলম বলেন, ০৫ আগস্টের কয়েকদিন পর থেকে একটি চক্র গ্রামের মানুষদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার নাম করে সংগঠিত করছিল। ঘটনার সময় সেই চক্রের আহ্বানে তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ঢাকায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়।
তোরাবগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ নাছিমা ও রৌশন বেগম বলেন, গাড়ি ভাড়া হিসেবে তিনি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও অনেকের কাছ থেকেই এভাবে টাকা নিয়েছে স্থানীয় সংগঠকরা।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনটি বাস ও চারটি মাইক্রোবাস জব্দ আছে। তবে মূলহোতাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। তারা ঢাকায় আছে। মাঝে মাঝে এসে ফরম পূরণ করে চলে যায়। তারা এখানকার হতদরিদ্র মানুষদেরকে ১ হাজার টাকায় সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে। এতে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন সমাবেশ করতে চেয়েছিল। ডিএমপির সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো সমাবেশ হয়নি, হবেও না।
দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়ণের দাবিতে ২৫ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংহতি সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। এ নিয়ে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান সমাবেশের আয়োজক সংগঠনের সদস্য মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
সাকু।