ট্রাম্পের দেয়া হুমকিতে মাথানত না করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চলমান তিন দিনের উপসাগরীয় অঞ্চল সফরের সময় ট্রাম্পের করা সমালোচনার জবাবে গত বুধবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, ট্রাম্প মনে করে এখানে এসে স্লোগান দিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে পারবে।
ট্রাম্পকে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে শহীদ হওয়া বিছানায় মরার চেয়েও অনেক বেশি মধুর। তারা আমাদের ভয় দেখাতে এসেছে? আমরা কোনো হুমকিতে মাথানত করবোন।
পেজেশকিয়ান আরও বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনার অভিযোগ করেছেন। ইরান এসব হুমকির মুখে কোনোভাবেই মাথানত করবেনা।
এর আগে, একই দিন সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত জিসিসি সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চান, তবে শর্ত হিসেবে দেশটিকে “সন্ত্রাসে মদদ বন্ধ করতে হবে, রক্তাক্ত প্রক্সি যুদ্ধ থামাতে হবে এবং স্থায়ী ও যাচাইযোগ্যভাবে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।”
ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারন তাদের দাবি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পারমানবিক অস্ত্রে সাফল্য অর্জন করলে ইরান সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করবে।
অন্যদিকে ইরান বারবার দাবি করে আসছে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এর কাজ করছে, যা সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে অনেক দূরে।
বুধবার কাতারের রাজধানী দোহায় একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নিয়ে ট্রাম্প আবারও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা তেহরানের।
ট্রাম্প বলেন, “এটা একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি, এবং আমরা সঠিক কাজটি করতে চাই। আমরা এমন কিছু করতে চাই যা হয়তো লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচাতে পারে। কারণ, এমন কিছু শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।”
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, “তিনি ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চান, তবে যদি ইরানের নেতৃত্ব এই শান্তির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আমাদের সামনে বিকল্প থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অনুমতি দেবেন না।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে চলছে। বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় বিশ্বশক্তিগুলোর এক সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ২০১৫ সালে একটি চুক্তি হয়, যার নাম ছিল জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, ২০১৮ সালে তিনি একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলে তা ভেঙে পড়ে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা দেশটির নিজস্বভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উপাদান উৎপাদনের ব্যাহত করবে।
এই নিষেধাজ্ঞায় ছয় ব্যক্তি ও বারোটি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করা হয়েছে, যারা “তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত” বলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এনএ/