মার্কিন ধনকুবের এবং টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেছেন। সরকারি ব্যয় কমাতে গঠিত ‘Department of Government Efficiency’ বা DOGE-এর প্রধানের দায়িত্ব থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বাজেট বিল নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মতভেদের পরপরই DOGE ছাড়ার ঘোষণা দিলেন মাস্ক। তাই আপাতত ট্রাম্পের সাথে তার বিরোধকেই মাস্কের DOGE থেকে সরে আসার কারন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত বুধবার সামাজিক মাধ্যম এক্স বা সাবেক টুইটার-এ দেওয়া এক পোস্টে ইলন মাস্ক লেখেন, “তার প্রশাসনে থাকার সময় “শেষ হয়েছে”। সরকারি অপচয় রোধে সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
‘Department of Government Efficiency’ বা DOGE-এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মাস্ককে নিয়োগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার কাজ ছিল ফেডারেল ব্যয় কমানো, কর্মী ছাঁটাই, সরকারি চুক্তি বাতিল এবং কিছু সংস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া। তিনি বছরে সর্বোচ্চ ১৩০ দিন বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে পারতেন। প্রায় চার মাস কাজ করার পর, তিনি আইনত সীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় পদত্যাগ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের “One Big Beautiful Bill” নামে পরিচিত ট্যাক্স-ও-বাজেট বিলকে কেন্দ্র করে মাস্কের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় ও সবার সামনে আসে। মাস্ক বলেন, “এই বিশাল ব্যয়ের বিল দেখে আমি হতাশ। একটি বিল হয় বড় হতে পারে, না হয় সুন্দর, কিন্তু একসাথে দুটো নয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, এই বাজেট প্রস্তাব তার নেতৃত্বাধীন DOGE প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সরকারি ব্যয় হ্রাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিলটিতে ট্রাম্পের ২০১৭ সালের ট্যাক্স-কাট বহাল রাখাসহ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার ও গণপ্রত্যাবাসন উদ্যোগে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইলন মাস্কের DOGE নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু থেকেই ছিলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা USAID বন্ধের উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি সমালোচনার ঝড় তোলে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে সংস্থাটির সদর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাঁটাই করা হয় প্রায় ১,৬০০ কর্মী এবং প্রায় ৪,৭০০ জনকে ছুটিতে পাঠানো হয়। তাদের মাত্র ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল অফিস ছাড়তে।
এই ঘটনায় একটি ফেডারেল আদালত মন্তব্য করে যে, DOGE-এর কার্যক্রম মার্কিন সংবিধান “লঙ্ঘন করেছে” এবং USAID কর্মসূচি বন্ধ সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
DOGE গঠনের সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এটি সরকারি ব্যয় হ্রাসের এক নতুন দিগন্ত তৈরি করবে। কিন্তু মাস্কের বিদায়ের পর প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে। প্রেসিডেন্ট এর দিক থেকে এখনো কোনো নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসেনি।
DOGE নিয়ে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। পেপারডাইন ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ও সাবেক কূটনীতিক কোলিন গ্র্যাফি বলেন, “DOGE-এর আসল শক্তি ছিল বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি মাস্কের মাধ্যমে ট্রাম্পের কাছে সরাসরি পৌঁছানো। মাস্ক ছাড়া এটি আর টিকবে না।”
ভোক্তা অধিকার সংস্থা Public Citizen-এর সহ-সভাপতি লিসা গিলবার্ট DOGE-কে“ধ্বংসের মন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেন। চ্যাথাম হাউজের গবেষক ম্যাক্স ইয়োয়েলি মন্তব্য করেন, মাস্কের স্বল্প সময়ের ভূমিকা হলেও তা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিচালনার পদ্ধতিকে “অপরিবর্তনীয়ভাবে পাল্টে দিয়েছে”।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিন DOGE প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই থেকে এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যয় সংকোচন নীতির প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তবে মাস্কের বিদায়ের পর প্রকল্পটির কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ এখন চরম অনিশ্চয়তায়।
এখন দেখার বিষয় ট্রাম্প এই বিতর্কিত প্রকল্পে নতুন নেতৃত্ব আনেন কিনা, নাকি DOGE ধীরে ধীরে ধুলোয় মিশে যাবে।
এনএ/


